ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের যন্ত্রণা দূর


ফারহানা জেরিন এলমা , আপডেট করা হয়েছে : 25-02-2022

ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের যন্ত্রণা দূর

কম-বেশি সবারই আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণার সঙ্গে পরিচয় আছে! তাই একথা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না যে একবার যদি এই যন্ত্রণা শুরু হয়, তখন শুধু দাঁত নয়, সারা মুখমন্ডল, কপাল, এমনকী চোখও কষ্ট হতে শুরু করে। মনে হয় কেউ যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে দাঁতের উপর। এক্ষেত্রে বেশিরভাগই পেন কিলার খেয়ে কষ্ট লাঘব করার চেষ্টায় লেগে পরেন।

আর কিছু মুষ্টিমেয় দুরুদুরু বুকে মাড়ি কেটে দাঁত বের করে নেন। কিন্তু যদি বলি এবার থেকে এমন যন্ত্রণা শুরু হলে এইসব কিছুই করতে হবে না, তাহলে কী বলবেন! মানে! তাহলে যন্ত্রণা কমাবে কীভাবে? খুব সহজ! একবার এই প্রবন্ধটি পড়ে ফেলুন, তাহলেই দেখবেন ইত্তর পয়ে গেছেন।

শসা-আলু এবং বাঁধাকোপি: এই তিনটি সবজি আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই সবজিগুলোর ভেতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান নিমেষে যন্ত্রণা কমাতে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখা শসা, আলু অথবা বাঁধাকোপি অল্প পরিমাণে কেটে নিয়ে আক্কেল দাঁতের উপরে লাগাতে হবে। তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে! প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে অল্প পরিমণে শসার পেস্ট মুখে লাগালেও কিন্তু দারুন উপকার পাওয়া যায়।

গোলমরিচ: শুনতে আজব লাগলেও এই ধারণার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে গোলমরিচ দারুন কাজে আসে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির ভেতরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে গোলমরিচকে? এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো গোলমরিচ নিয়ে তার সঙ্গে জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটি তুলোর সাহায্যে যেখানে যন্ত্রণা হচ্ছে, সেখানে লাগিয়ে রাখতে হবে। এমনটা করলেই দেখবেন কিছু সময়েই কষ্ট কমে গেছে।

টি-ট্রি অয়েল: একটা তুলোতে অল্প করে এই তেলটি নিয়ে দাঁতের উপর ৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই যন্ত্রণা কমে যাবে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান নিমেষে প্রদাহ কমিয়ে ফেলে। ফলে কষ্ট ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।

রসুন: এবার থেকে যখনই আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণা শুরু হবে, তখনই এক কোয়া রসুন নিয়ে চিবোতে শুরু করে দেবেন। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যে কোনও ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে পুনরায় যাতে এমন কষ্ট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখে।

সেগে শাক: প্রদাহ এবং যন্ত্রণা কমাতে এই শাকটি দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে ২ চামচ শুকনো সেগে শাকের পাতার সঙ্গে ১ চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রনের সঙ্গে অল্প করে ভদকা মিশিয়ে নিন। এবার সেটি আক্কেল দাঁতের উপর ৫ মিনিট ধরে লাগান। এমনটা করলেই দেখবেন অল্প সময়েই যন্ত্রণা কমে যাবে।

লবণ: দুটো রসুনের কোয়া থেঁতো করে তার সঙ্গে অল্প করে লবণ মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই পেস্টটা ভাল করে আক্কেল দাঁতের উপর লাগিয়ে দিন। আর যদি এমনটা করতে না পারেন তাহলে পেস্টটি ব্রাশে লাগিয়ে দাঁত মেজে নিন। দেখবেন যন্ত্রণা কমে যাবে। প্রসঙ্গত, ১ কাপ গরম জলে ১ চামচ লবণ মিশিয়ে সেই জল দিয়ে কুলি করলেও এক্ষেত্রে দারুন আরাম পাওয়া যায়।

হলুদ: এই প্রাকৃতিক উপাদানটির ভেতরে উপস্থিত অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াস প্রপাটিজ নিমেষে আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে বিসেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের মাঝে মধ্যেই দাঁতের যন্ত্রণায় জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে, তারা এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগেতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে এক কাপ জলে ৫ গ্রাম হলুদ গুঁড়ো, ২ টো লবঙ্গ এবং ২ টো শুকনো পেয়ারা পাতা ফেলে জলটা ফুটিয়ে নিন। এরপর সেই জলটা দিয়ে ভাল করে মুখটা ধুয়ে নিন। এইভাবে কয়েকবার কুলকুচি করলেই দেখবেন কেল্লাফতে!

পেঁয়াজ: আক্কেল দাঁতকে কাবু করতে পেঁয়াজ দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে অল্প করে পেঁয়াজ চিবিয়ে নিতে পারেন অথবা আক্কেল দাঁতের উপর রেথে দিলেও দারুন উপকার মেলে। আরেকভাবে পেঁয়াজকে কাজে লাগিয়ে এমন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। কীভাবে? পরিমাণ মতো পেঁয়াজ নিয়ে তার থেকে রসটা সংগ্রহ করে নিন। তারপর সেই রসটা আক্কেল দাঁতের উপর ধীরে ধীরে লাগিয়ে দিন। এমনটা করলে দেখবেন চোখের পলকে কষ্ট কমে যাবে।

পিপারমেন্ট তেল: এবার থেকে এমন যন্ত্রণা হলেই কয়েক ফোঁটা পিপারমেন্ট তেল ফেলে দেবেন দাঁতের উপর। তাহলেই কষ্ট এবং ব্যথা একেবারে কমে যাবে। আর যদি হাতের কাছে এই তেল না পান, তাহলে কয়েকটা পিপারমেন্ট পাতা নিয়ে চিবিয়ে নিলেও সমান উপকার মিলবে।

অ্যারেগেনো তেল: যন্ত্রণা কমাতে এই তেলটির কোনও বিকল্প নেই। এটি আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পেয়ারা পাতা: আগেকার দিনে দাঁতে ব্যথা হলেই পেয়ারা পাতা চিবোনোর পরামর্শ দিতেন বড়রা। এই সহজ পদ্ধতিটিকে আজকাল আর কেউ কাজে লাগান না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, পেয়ারা পাতায় উপস্থিত অ্যানালজেসিকস নামে একটি উপাদান চোখের পলকে যন্ত্রণা তো কমায়ই, সেই সঙ্গে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদেরও মেরে ফেলে। ফলে শুধু আক্কেল দাঁতের সমস্যা নয়, সেই সঙ্গে আরও অনেক দাঁত সম্পর্কিত রোগ সেরে যায়।

লবঙ্গ: প্রাকৃতিক পেনকিলার হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে লবঙ্গের। তাই তো অক্কেল দাঁতের ব্যথায় এবার থেকে যখন আক্কেল গুড়ুম হওয়ার জোগার হবে, তখন অল্প করে লবঙ্গ নিয়ে দাঁতের ফাঁকে রেখে দেবেন। এমনটা করলেই দেখবেন পলকে কষ্ট কমে যাবে। আসলে এতে উপস্থিত ইউজেনল নামে একটি উপাদান সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা জায়গাকে অসার করে দেয়। ফলে যন্ত্রণা যে হচ্ছে তার মালুমই পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, এমন ক্ষেত্রে লবঙ্গ তেল ব্যবহার করলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।

রাজশাহীর সময় /এএইচ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]