বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়ার পরিণাম কী?


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 05-06-2023

বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়ার পরিণাম কী?

ধ্বংসহোক সেই ব্যক্তি! যে তার বাবা-মা উভয়কে অথবা উভয়ের যে কোনো একজনকে বার্ধক্যে পাওয়ার পরও জান্নাত অর্জন করতে পারলো না। এ কথা শুনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আমিন’। অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করুন।’ (মিশকাত) কত মারাত্মক কথা! এ হাদিস থেকে অনুমান করা যায় যে, মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্য আচরণ করার পরিণতি কত ভয়াবহ।

বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী কাজ। কেননা আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ পালন করা প্রত্যেক সন্তানের জন্য ফরজ। এ জন্য যারা বাবা-মায়ের অবাধ্য হবে; এটি তাদের জন্য কবিরা গুনাহ।

বাবা-মায়ের প্রতি উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

‘আর আমি মানুষকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। (আরও) নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান: আয়াত ১৪)

কোরআনুল কারিমের এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নির্দেশ হলো- বাবা-মায়ের অবাধ্য না হওয়া। বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়ার অর্থই হলো- আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। আর তা কবিরা গুনাহ।

বাবা-মা অমুসলিম হলে?

এমনকি বাবা-মা অমুসলিম হলেও তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা আবশ্যক। তা কতটা আবশ্যক কোরআনের একটি আয়াত থেকে সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা শুধু মুমিন মুসলমান নয়; বরং সব মানুষকে উদ্দেশ্য করে বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তাঁরা অমুসলিম হলেও তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ

আমি মানুষকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে্যর বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল-

رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি আওযিনি আন আশকুরা নিমাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালেদাইয়্যা ওয়া আন আমালা সালেহান তারদাহু ওয়া আসলিহ লি ফি জুররিয়্যাতি ইন্নি তুবতু ইলাইকা ওয়া ইন্নি মিনাল মুসলিমিন।’

অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে এরূপ ভাগ্য দান করো, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর আদায় করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার বাবা-মাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদের সৎকর্মপরায়ণ করো, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।’ (সুরা আহক্বাফ: আয়াত ১৫)

এছাড়াও হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবা-মায়ের সঙ্গে অবাধ্য আচরণকে কবিরা গুনাহ ও হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলো-

১. হজরত আবু বাকারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ (কবিরা গুনাহ) কি তা বলে দেব না? আর তাহল-

‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি)

২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কবিরা গুনাহর মধ্যে একটি হলো মা-বাবাকে গালি দেওয়া।’ (মুসলিম)

৩. বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর মায়ের অবাধ্যতাকে হারাম করেছেন। (এছাড়াও) কন্যা-সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া; দানের ব্যাপারে নিজে দান না করে অন্যের কাছে পাওয়ার মনোভাষণা চিন্তা করা; অযথা বাদানুবাদ তথা তর্ক-বিতর্ক করা; অধিক যাঞ্চা ও সম্পদের অপচয়কেও হারাম করেছেন।

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত ওমর ইবনে হাজামকে ইয়েমেনবাসীর কাছে এ মর্মে পত্র লিখে পাঠান যে, ‘কেয়ামতের দিন যেসব ব্যাপারগুলো কবিরা গুনাহ হিসেবে সাব্যস্ত হবে; তাহলো-

> আল্লাহর সঙ্গে শরিক সাব্যস্ত করা;

> কোনো মুমিনকে হত্যা করা;

> আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের সময় যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া;

> বাবা-মায়ের অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া;

> বিবাহিত নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো;

> যাদু বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া;

> সুদ খাওয়া এবং

> ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করা।’ (ইবনে হিব্বান)

মনে রাখতে হবে

বাবা-মার অবাধ্যতায় শুধু কবিরা গোনাহ হয় এমনটিই নয়, বরং যারা বাবা-মার অবাধ্য হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির দিকে ফিরেও তাকাবেন না। আরও অনেক বর্ণনা এসেছে হাদিসে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্য হওয়ার মতো অপরাধে কবিরা গোনাহ ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। কুরআনের নির্দেশ মেনে হারাম ও কবিরা গোনাহমুক্ত থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কবিরা গোনাহ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে বাবা-মার প্রতি আনুগত্য ও তাদের সেবা করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের নির্দেশ মানার এবং হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]