আল্লাহমুখী বলতে যা বোঝায়


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 05-06-2023

আল্লাহমুখী বলতে যা বোঝায়

ভালোবাসার সম্পর্ক মানুষকে প্রিয়তমার অভিমুখী করে রাখে। সে যে কাজেই মগ্ন থাকুক না কেন তার মন পড়ে থাকে প্রিয়তমার কাছে। মুমিন আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাই আল্লাহ সব সময় তাঁর স্মরণে থাকেন।

এক মুহূর্তের জন্যও তিনি আল্লাহকে ভুলে যান না। কোরআনের ভাষায় যাকে ‘ইনাবাত ইলাল্লাহ’ বলা হয়। ইনাবাত অর্থ অভিমুখী হওয়া আর ইনাবাত ইলাল্লাহ অর্থ আল্লাহমুখী হওয়া। মুমিনের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও কর্মকাণ্ড সব কিছু আল্লাহর অভিমুখী হয়ে থাকে।
পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে মুমিনকে আল্লাহমুখী হতে বলা হয়েছে।

আল্লাহমুখী হওয়ার অর্থ

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, ইনাবাত তথা আল্লাহমুখী হওয়ার অর্থ হলো সব সময় আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁর জন্য একনিষ্ঠ আমল করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া।

ইনাবাত দুই প্রকার : ক. সাধারণ ইনাবাত : যা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী, নেককার ও পাপিষ্ঠ সবার মধ্যে পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যখন মানুষকে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন তারা তাদের প্রতিপালকের প্রার্থনা করে তাঁর প্রতি নিবিষ্ট হয়ে।

’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৩৩)

খ. আল্লাহপ্রেমীদের ইনাবাত : এটা হলো দাসত্ব ও ভালোবাসার সঙ্গে অভিমুখী হওয়া। এর মূলে আছে চারটি বিষয় : ১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, ২. তাঁর জন্য বিনম্র হওয়া, ৩. তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়া, ৪. তিনি ছাড়া সব কিছু উপেক্ষা করা। (মাদারিজুস সালিকিন : ১/৪৩৪)

আল্লাহমুখী হওয়ার গুরুত্ব

কোরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহমুখী জীবনযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।

১. নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য : ‘আল্লাহমুখী হওয়া’ নবীদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। কোরআনে একাধিক নবীর ব্যাপারে ‘মুনিব’ তথা আল্লাহমুখী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

যেমন—ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ইবরাহিম ছিল সহনশীল, অতি কোমলহৃদয়, আল্লাহমুখী।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার দ্বারা যা কিছু হয় তা কেবল আল্লাহরই সাহায্যে হয়। আমি তাঁর ওপর নির্ভর করেছি এবং আমি (সব বিষয়ে) তাঁরই অভিমুখী হই।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৮৮)

২. আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশ : মহান আল্লাহ বান্দাদের তাঁর অভিমুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও তোমাদের ওপর আজাব আসার আগেই; অতঃপর তোমাদের সাহায্য করা হবে না।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৫৪)

৩. সুপথ লাভের মাধ্যম : আল্লাহমুখী জীবন যাপন করা সুপথ লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলে দিন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আর তিনি নিজের দিকে তাদেরকেই পথ দেখান যারা আল্লাহমুখী হয়।’ (সুরা : রা’দ, আয়াত : ২৭)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের দিকে টেনে নেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে নিজের দিকে পথ দেখান।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১৩)

৪. আল্লাহর পরিচয় লাভে সহায়ক : আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। এসব নিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা সম্ভব। আল্লাহমুখী ব্যক্তিরাই এসব নিদর্শন অনুধাবন ও তাঁর পরিচয় লাভের সৌভাগ্য বেশি লাভ করে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক আল্লাহমুখী বান্দার জন্য আছে নিদর্শন।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৯)

৫. উপদেশ গ্রহণকারী : আল্লাহমুখী বান্দারা আল্লাহর নিদর্শন, কুদরত ও প্রাত্যহিক ঘটনাবলি থেকে বেশি উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘উপদেশ সে-ই গ্রহণ করে, যে আল্লাহর অভিমুখী হয়।’(সুরা : মুমিন, আয়াত : ১৩)

৬. তারাই অনুসৃত : আল্লাহ তাঁর সেই সব বান্দার অনুসরণ করতে বলেছেন, যারা তাঁর অভিমুখী। আল্লাহ বলেন, ‘আর সে ব্যক্তির পথ অনুসরণ করবে, যে আমার অভিমুখী হয়েছে।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৫)

৭. উভয় জগতে সুসংবাদ : আল্লাহমুখী বান্দাদের জন্য আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ রেখেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা তাগুতের উপাসনা করা থেকে বেঁচে রইল এবং আল্লাহর অভিমুখী হলো, তাদেরই জন্য আছে সুসংবাদ।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ১৭)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর অভিমুখী হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]