এই মৃত্যু মিছিল থামবে কোথায়? বালেশ্বরের বাহানাগা বাজারের কাছে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরাগুলোর আশেপাশে এখনও চলছে হাহাকার। কার্যত ভ্যানে তুলে বোঝাই করা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মর্গে। সন্ধান নেই অনেকের। ২৮৮ জন মারা গিয়েছে বলে সরকারিভাবে জানিয়েছে রেল। স্বজনহারাদের কান্নায় ভেসে আসছে গুমরে থাকা প্রশ্ন, এই ঘটনার দায় কার?
২৮৮ জন! আজ শুধুই তারা সংখ্যামাত্র! কিন্তু ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) বলছে, গত দশ বছরে স্রেফ রেল দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ। তার বেশিরভাগটাই কিন্তু দুটো ট্রেনের মুখোমুখি ধাক্কা থেকে নয়। এনসিআরবি বলছে, ওই আড়াই লক্ষের সত্তরভাগেরও বেশি মৃত্যু ঘটেছে হয় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে, বা ট্রেনে চাপা পড়ে!
এনসিআরবি আধিকারিকরা রেল-দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেন। ১) বেলাইন বা ‘ডিরেলমেন্ট’, ২) সংঘর্ষ বা ‘কলিশনস’, ৩) বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ড, ৪) ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া বা রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কা লাগা, ও ৫) অন্যান্য। এর মধ্যে আবার এনসিআরবির ‘দুর্ঘটনায় নিহত বা আত্মহত্যা’ বিষয়ক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে ২৫৮৭২ জন মানুষ রেল-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০১২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭,০০০-এ, ২০১৩ সালে আরও বেড়ে হয় ২৭,৭৬৫, পরে ২০১৪ সালে আবার নেমে দাঁড়ায় ২৫০০০ জনে। ২০১৭ সালের পর থেকে সংখ্যাটা খানিক কমে এসে দাঁড়ায় ২৪০০০ জনে।
২০২০ সালে কোভিড অতিমারির জন্য সারা দেশেই রেল পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যায়। সেই সময় প্রত্যাশিতভাবেই এই সংখ্যাটা নেমে আসে ১১ হাজার জনে। ২০২১ সালে পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের দিকে যেতেই পরিসংখ্যান বেড়ে চলে যায় ১৬ হাজারের ঘরে।
এই বিপুল মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই রয়েছে চতুর্থ, অর্থাৎ ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে বা ট্রেনের ধাক্কায় মৃতের ঘরে। যেমন ২০২১ সালে মোট ১৬,৪৩১ জন নিহতের মধ্যে ১১,০৩৬ জনেরই প্রাণ গিয়েছে উক্ত এই দুটি কারণে। ২০১৭ থেকে ২০২১ এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ মৃত্যুর মধ্যে ৭১০০০ মৃত্যুই হয়েছে ট্রেন থেকে পড়ে বা ট্রেনের ধাক্কায়। তুলনায় বেলাইন হয়ে মারা গিয়েছেন ২৯৩ জন, আর ট্রেনের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪৬ জন।
কোন রাজ্যে বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই মৃতুমিছিল সবচেয়ে বেশি? তারও একটা তালিকা পাওয়া যাচ্ছে এনসিআরবি থেকে। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। প্রায় ১৭০০০ লোক প্রাণ হারিয়েছেন মরাঠাদেশে। তারপরেই রয়েছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ। প্রাণ গিয়েছে ১৩০৭৪ জনের। আর তৃতীয় স্থানে? আমাদের একান্ত আপন পশ্চিমবঙ্গ। ১১৯৬৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে বঙ্গভূমিতে।