ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। রবিবার (৪ জুন) যাত্রা শুরুর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এ সময় তারা পদযাত্রায় বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আজ আমরা পদযাত্রা করছি। আপনারা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার) আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিতে আসবেন না। কিন্তু ইতোমধ্যে জেনেছি, টাঙ্গাইলে আমাদের সমাবেশস্থলে শান্তি সমাবেশ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত আমাদের জন্য কোনও সমাবেশ স্থান নির্ধারণ করেনি।’
তিনি বলেন, ‘এক দিকে বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন আরেক দিকে শান্তি সমাবেশের নামে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করছেন। এই দ্বিচারিতা জনগণ আর মানবে না। এর বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, অবিলম্বে এসব হামলা-বাধা, নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।’
সমাবেশে সাইফুল হক বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন সেই বক্তব্যে রাগ-ক্ষোভ-অভিমানের একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতোদিন সরকার বলছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নাকি এই ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার– তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরেকটা দখলদারিত্ব, আরেকটা তামাশা নির্বাচন, আরেকটা এক তরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এটা বুঝতে পেরে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি জারি করেছে। এভাবে বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্ত করছে সরকার। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে তারা দেশ ও জনগণকে বাজি ধরছে। এ ধরনের দায়িত্বহীন ও গণবিরোধী সরকার জনগণ মেনে নিতে পারে না।’
ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনের ম্যুরালে অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও বাংলাদেশ সরকারকে এর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করতে দেখিনি, নিন্দা জানাতে দেখিনি। ভারতের এই তৎপরতা এই অঞ্চলের দেশগুলোর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সরাসরি একটা উসকানি, অস্থিতিশীলতা, একটা সাম্প্রদায়িক বার্তা তৈরি করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রবিবার দুপুরে গাজীপুর চৌরাস্তায় সমাবেশ; বিকাল ৪টায় টাঙ্গাইলের করাতিপাড়া বাইপাস মোড়ে সমাবেশ করা হবে। পরদিন (৫ জুন) বেলা ১১টায় সমাবেশ হবে সিরাজগঞ্জে শহীদ মিনার সংলগ্ন মুক্তি সোপানে। এদিন বিকাল ৪টায় বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় সমাবেশ করবে মঞ্চ। ৬ জুন বেলা ১১টায় বগুড়ার সাতমাথায় সমাবেশ এবং বিকাল ৪টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শেষ দিন ৭ জুন বেলা ১১টায় দিনাজপুরে ইনস্টিটিউট চত্বরে সমাবেশ, বিকাল ৪টায় রংপুরে টাউন হল চত্বরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে। এছাড়া রোডমার্চ চলাকালীন সময় কিছু অনির্ধারিত পথসভায়ও নেতারা বক্তব্য রাখতে পারেন।
ঢাকা-দিনাজপুর রোডমার্চে ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এই ছয়টি সংগঠন থেকে ১৫ জন করে ৯০ জনের একটি দল পদযাত্রা শুরু করে। এরপর নেতারা মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে যান। সেখান থেকে তারা মাইক্রোবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।