পদে পদে কর আর ভ্যাটের জাল


অর্থনীতি ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 02-06-2023

পদে পদে কর আর ভ্যাটের জাল

আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ’র শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী এবার কঠোর হয়েছেন নিম্ন থেকে উচ্চ-সবস্তরের মানুষের ওপর। অর্থ সংগ্রহের দিকে দিয়েছেন বেশি নজর। যে কারণে পদে পদে ফেলছেন ভ্যাট ও করের জাল। এতে মানুষের দুর্দশা ও দুর্ভোগ বাড়বে, প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামে গরম হয়ে উঠবে বাজার। তবে বেশ ঠান্ডা হবে আইএমএফ।

সরকার আয় বাড়াতে নজর দিয়েছে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট শুল্কের ওপর। ক্ষেত্র বিশেষ নতুন ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি মোবাইল ফোন, আমদানিকৃত এলপি গ্যাস, চশমার ফ্রেম ও বাইসাইকেলের দাম বাড়বে। 

এছাড়া গৃহস্থালিসামগ্রীর ক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই হারে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজসপত্রের (হাঁড়ি-পাতিল, থালাবাসন) ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। 

কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাইক্রোওয়েভ ওভেন এবং উচ্চ সিসির গাড়িতে খরচ বাড়বে। এছাড়া নির্মাণ ব্যয় বাড়বে। বিশেষ করে সিমেন্ট, শিরিষ কাগজ, আঠা বা গ্লুসহ খাদ্যসামগ্রী মাছের টুকরা, চিজ ও দই, চা-কফিমেট, গ্যাস লাইটারের দাম বাড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়বে। সুস্বাস্থ্যের জন্য বাদাম-খেজুর খান অনেকে। বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

মোবাইল ফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ, সংযোজন পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে আগে রিটার্ন জমা দেওয়া গেলেও আগামী দিনে স্লিপ (প্রাপ্তিস্বীকারপত্র) পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সঞ্চয়পত্র কেনা এবং ব্যাংক ঋণ নেওয়া যাবে না। ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, বাড়ির নকশা অনুমোদনসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না।

তবে মূল্যস্ফীতি বিবেচানায় কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর সীমায়। পুরুষদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং নারী ও ৬৫-ঊর্ধ্ব চার লাখ টাকা, প্রতিবন্ধীর ৪ লাখ ৭৫ হাজার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নন লিস্টেট কোম্পানির এক ব্যক্তি কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ, আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্তি কোম্পানির কর হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২০ শতাংশ। তবে করপোরেট কর হার অপরিবর্তিত রয়েছে।

নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার প্রত্যাশা রেখে ভোটের আগে রেকর্ড ঘাটতির যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তার ১৭ শতাংশের বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জোগাড় করতে হবে। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন এর মধ্যে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যা বাস্তবায়ন করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

আগামী অর্থবছরে ৬টি চ্যালেঞ্জ দেখছেন অর্থমন্ত্রী। এরমধ্যে অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মোকাবিলা। বাকিগুলো হচ্ছে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনর ভারসাম্য পরিস্থিতি উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কাজ শুরু করেছি। একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, উদ্ভাবনী, বুদ্ধিদীপ্ত ও জ্ঞাননির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। এর ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।



সূত্র: দৈনিক যুগান্তর


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]