সরকারের ঋণ কমেছে ২৩ হাজার কোটি টাকা


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 31-05-2023

সরকারের ঋণ কমেছে ২৩ হাজার কোটি টাকা

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানতে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে শুরু করেছে। জানুয়ারি থেকে মে-পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ কমানো হয়েছে ২৩ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ঋণের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৬০ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ কমানো হলেও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বেড়েছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সরকারের রাজস্ব আদায় কম ও খরচ বাড়ায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকে। জুলাইয়ে ঋণ নিয়েছিল ৫৩১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই মাসে নতুন ঋণ না নিয়ে বরং আগের নেওয়া ঋণের মধ্যে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে নতুন কোনো ঋণ না নিয়ে আগের নেওয়া ঋণ থেকে ৯ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল। ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যায়। বেড়ে যায় মানুষের জীবনযাত্রার মান। একই সঙ্গে ছাপানো টাকায় ঋণ নেওয়ার ফলে সরকারকে অর্থনীতিবিদদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এমন ত্রিমুখী চাপে পড়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নেওয়া কমাতে শুরু করে।

একই সঙ্গে আগের নেওয়া ঋণও পরিশোধ করতে শুরু করেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের স্থিতিও কমতে শুরু করেছে। সরকার বিভিন্ন খাতের খরচ কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের লাগাম টেনেছে। চলতি অর্থবছর ২৫ মে পর্যন্ত সাময়িক হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। জানুয়ারি থেকে মে-এই পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমেছে ২৩ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চলতি অর্থবছরে গৃহীত সর্বোচ্চ ঋণের ৩৫ দশমিক ৬০ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়ার পর জানুয়ারি থেকে তা কমতে থাকে। জানুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকায়। এক মাসে কমেছে ১৯ হাজার ১২৭ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে আবার কিছুটা বেড়ে ৪৯ হাজার ৫০৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই মাসে ঋণ বেড়েছিল ৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৬ শতাংশ। মার্চে ঋণ আবার কমে ৪৬ হাজার ১৫৩ কোটিতে দাঁড়ায়।

এক মাসে ঋণ কমে ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ আরও কমে ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। মার্চের তুলনায় ঋণ কমে ২ হাজার ৪৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর জুনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর বিপরীতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থকে বলা হয় ‘হাইপাওয়ার্ড মানি’ বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাকা, যা বাজারে এসে দ্বিগুণ বা আড়াই গুণ টাকা উৎপাদন করে। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে টাকার মান কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা কোনো উৎপাদন খাত থেকে আসে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ভল্টে রাখে। চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো বাজারে ছাড়ে। এই ছাপানো টাকা থেকেই সরকার ঋণ গ্রহণ করে।

ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। এর সঙ্গে বাজারে ডলারের সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে ডলারের দাম বেড়ে টাকার মান কমে যাচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৯ শতাংশ অবম্যূায়ন হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ায় দেশীয় বাজারেও বেড়েছে। এসব মিলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত পয়েন্ট টু পয়েন্ট (গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। বাকি রয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা তিন মাসে আদায় করার কথা। ওই রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে ঘাটতি থাকবে।

সূত্র জানায়, অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয় কিছুটা বাড়তে পারে। তখন ঋণের পরিমাণ আরও কিছুটা কমতে পারে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]