কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে বর্তমানে ভারত, চীন, রাশিয়া, তুরস্কসহ ২৮টি দেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ২৬টি দেশের সঙ্গে চুক্তি কার্যকর হলেও সার্বিয়া ও আর্জেন্টিনার সঙ্গে এখনও চুক্তি কার্যকর হয়নি। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি কূটনীতিক, অফিসিয়াল ও সার্ভিস পাসপোর্টধারীরা এসব দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন পাকিস্তান, কানাডা, ইতালিসহ আরও ৪৬টি দেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে চুক্তির খসড়া তৈরি করার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৬টি দেশের কূটনৈতিক, অফিসিয়াল ও সার্ভিস পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। দেশগুলো মেক্সিকো, আলজেরিয়া, লিবিয়া, ইথিওপিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাজাখস্তান, কেনিয়া, মিসর, ইতালি, দক্ষিণ সুদান, গাম্বিয়া, পেরু, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, জর্জিয়া, ইরান, আলবেনীয়া, ইরাক, নেদারল্যান্ডস, লিথুয়ানিয়া, রুয়ান্ডা, প্যালেস্টাইন, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, লাটভিয়া, সেইন্ট ক্রিস্টিফার অ্যান্ড নেভিস, লেবানন, বাহরাইন, কিরগিজস্থান, ডোমিনিকান, উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, আর্মেনিয়া, মালি, পাকিস্তান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কানাডা, গুয়াতেমালা, আজারবাইজান, বুর্কিনা ফাসো, উজবেকিস্তান, ক্রোয়েশিয়া ও কলম্বিয়া।
এর মধ্যে উজবেকিস্তান চুক্তি করার বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে সম্মত হওয়ায় চুক্তির খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। তবে সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ শুধু কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতির বিষয়ে আগ্রহী। তারা অফিসিয়াল ও সার্ভিস পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতির বিষয়ে চুক্তিতে আগ্রহী নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সুুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তিটি ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে অনুমোদিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান অবস্থান এবং হালনাগাদ অগ্রগতি জরুরিভিত্তিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগকে অবহিত করার জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার চুক্তিটি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আগ্রহী। শিগগিরই চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৮টি দেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করলেও এর মধ্যে সব পাসপোর্টধারীর জন্য (এমপ্লয়মেন্ট ব্যতীত) ভিসা অব্যাহতির দেশ হচ্ছে শুধু মালদ্বীপ। আর কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি দেশের সংখ্যা ২৩টি। এগুলো হচ্ছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চিলি, লাওস, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, কুয়েত, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ভারত, চীন, ব্রুনাই, ওমান, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, কাতার, বতসোয়ানা, কসোভো ও দক্ষিণ কোরিয়া। আর শুধু কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি দেশ হচ্ছে জাপান ও থাইল্যান্ড। ভিসা ছাড়া জাপানে ৯০ দিন এবং থাইল্যান্ডে ৩০ দিন অবস্থান করতে পারবেন কূটনীতিকরা। এ ছাড়া সার্বিয়া এবং আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতির বিষয়ে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে চুক্তি সই হয়। আর সার্বিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে কয়েক মাস আগে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তিটি হয়েছিল গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর। এ চুক্তি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া বতসোয়ানার সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এবং কসোভার সঙ্গে চুক্তি কার্যকর হয়েছে গত ১ মার্চ থেকে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ভিসা অব্যাহতি চুক্তি ছাড়াই বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য স্বল্পমেয়াদে ভ্রমণের জন্য ভিসা অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে আসছে বলে জানায় সুরক্ষা সেবা বিভাগ। কর্মকর্তারা জানান, ই-গেট কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে অনেক দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করতে আগ্রহী হচ্ছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশের পাসপোর্ট শক্তিশালী হয়। বিশ্বের অনেক দেশের কূটনীতিকসহ সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। এ ধরনের চুক্তি যত বাড়বে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তত শক্তিশালী হবে। তাই বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী বলে কর্মকর্তারা জানান ।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মো.সাইফুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, নতুন আরও ৪৬টি দেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতির চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কাজ চলছে। তবে এসব দেশের মধ্যে বেশিরভাগই দেশই শুধু কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতির বিষয়ে আগ্রহী। তারা অফিসিয়াল ও সার্ভিস পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি দিতে আগ্রহী নয়। বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তির খসড়া তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ভিসা অব্যাহতি চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চুক্তির খসড়া তৈরির পর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং ভেটিং হয়ে আসার পর খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়।