সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 30-05-2023

সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকারের অর্থ বিভাগ। এ জন্য চাকরি (বেতন-ভাতাদি) আদেশ-২০১৫ সংশোধন করা হচ্ছে। বেতন-ভাতাদি আদেশের ৩ ধারায় সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা আছে।

সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধির নির্দেশনা দেন।সে অনুযায়ী শুরুতে বেতন বৃদ্ধির বিদ্যমান হার পরিবর্তন করা হবে। এরপর ১ থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত সমান হারে বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব আসতে পারে। এতে সব গ্রেডের বেতন সমন্বয় হবে। আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৬.৫ শতাংশ।

গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল সরকারি হিসাবে ৯.২৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ বাড়লে বাড়তি খরচ হতে পারে চার হাজার 

বেতন

কোটি টাকা। ২০১৫ সালে যখন সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়, তখন মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশ ধরে পরবর্তী বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঠিক করা হয়।

তবে এখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করতে ভারতসহ কয়েকটি দেশের বেতনকাঠামো পর্যালোচনা করছে অর্থ বিভাগ।

একই সঙ্গে বিভিন্ন গ্রেডের বেতনবৈষম্য সহনীয় করার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। এসব কাজ শেষ করে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

তবে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে বেতন বৃদ্ধির সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। কারণ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে বেতন-ভাতাদি আদেশসহ আরো কিছু বিধি সংশোধন করতে হবে। এ জন্য অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে।বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এসংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরির কাজ শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে নতুন বেতন বৃদ্ধির হার সমন্বয় করতে হবে। কারণ প্রতিবছর কর্মচারীদের যে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয়, সেখানে কারো ৩.৭৫ শতাংশ, কারো ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রাথমিক ঘোষণা দিতে পারেন। এরপর বেতন বৃদ্ধির কাজ চূড়ান্ত করা হবে। কর্মচারীদের জন্য যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে তা বাজেট ঘোষণার পরও মেটানো যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় বেতন স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি মাসে ৭৮ হাজার টাকা বেতন নির্ধারিত। একইভাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮২ হাজার টাকা নির্ধারিত। প্রতিবছর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয় গ্রেড-২ পদে ৩.৭৫ শতাংশ, গ্রেড-৩ ও ৪ পদে ৪ শতাংশ, গ্রেড-৫ পদে ৪.৫ শতাংশ, গ্রেড-৬ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে ৫ শতাংশ করে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাস্তবায়ন) আবদুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ পাঠানো হবে।’ তিনি বলেন, বেতন-ভাতাদি আদেশের বিভিন্ন ধারা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তা সংশোধন করা হতে পারে।

অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহম্মদ আহসানউল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় অবশ্যই কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা সহজেই সমন্বয় করা সম্ভব। বাজেট ঘোষণার ছয় মাস পর হলেও অতিরিক্ত ওই অর্থ সমন্বয় করা যাবে। কারণ অন্য অনেক খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ থাকে। সেই অতিরিক্ত বরাদ্দের অর্থ ফের উপযোজন করার নিয়ম আছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১০ শতাংশ মূল বেতন বৃদ্ধি হলে চার হাজার কোটি, ১৫ শতাংশে ছয় হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশে আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে। তবে বেতন বৃদ্ধির হার কত হতে পারে, তা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৬.৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে এ হারই হতে পারে বেতন বৃদ্ধির একটি ভিত্তি। আবার বাজেট ঘোষণার পর জুন বা জুলাই শেষে মূল্যস্ফীতির হার কত থাকে, সেটাও হতে পারে আরেকটি ভিত্তি। উভয় বিকল্প হাতে নিয়েই এগোচ্ছে অর্থ বিভাগ। তবে যখনই প্রজ্ঞাপন জারি হোক না কেন, তা কার্যকর করা হবে পেছনের তারিখ বা অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে।

বেতন স্কেলে বৈষম্য : বর্তমানে গ্রেড-১ (সচিব) পদে মূল বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, টিফিন, আপ্যায়ন, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা, কুক, টেলিফোন, মোবাইল ভাতাসহ বেতন এক লাখ ৮২ হাজার ১২০ টাকা। গ্রেড-১০-এ সর্বসাকল্যে বেতন ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে বেতনের ব্যবধান এক লাখ ৫৫ হাজার ৬২০ টাকা।

আবার গ্রেড-১১ পদে মোট বেতন ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। গ্রেড-২০ পদে ১৫ হাজার ১৭৫ টাকা। গ্রেড-১১ থেকে ২০ পদের মধ্যে বেতনের ব্যবধান ছয় হাজার ৩৭৫ টাকা।

সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের পৃষ্ঠপোষক হেদায়েত হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারদর ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নতুন বেতনকাঠামো প্রণয়ন করা উচিত। এ জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে পরিমিত অর্থ বরাদ্দ রাখা জরুরি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘উন্নত রাষ্ট্রে প্রতিবছর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয় মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী। আমাদের দেশে তা না হওয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়। এখন জিনিসপত্রের যে দাম, তা বিবেচনায় নিলে মহার্ঘ ভাতা দেওয়াই উচিত ছিল। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে কিছু একটা করা হচ্ছে, এটা মন্দের ভালো।’ কালের কণ্ঠ।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]