কিছুদিন পর পর ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে অনেক প্রাণহানি, আহত ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রাণহানির মতো মারাত্মক ক্ষতি ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব ঝড়-বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের করণীয় কী? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?
আল্লাহর নিদর্শন ও আজাব
ঝড়-বজ্রপাত-জলোচ্ছ্বাস-ভূমিকম্পসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্ক হওয়ার নিদর্শন ও আজাব। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে, সে সময় মানুষের করণীয় কী? এ বিষয়ে কোরআন এবং সুন্নাহতে সুস্পষ্ট সমাধান ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। করণীয় কী তাও জানা যায়। মহান আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন-
وَالَّذِينَ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا صُمٌّ وَبُكْمٌ فِي الظُّلُمَاتِ مَن يَشَإِ اللّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারের মধ্যে মূক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা আনআম : ৩৯)
قُلْ أَرَأَيْتُكُم إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُ اللّهِ أَوْ أَتَتْكُمُ السَّاعَةُ أَغَيْرَ اللّهِ تَدْعُونَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
(হে রাসুল আপনি) বলুন! বলতো দেখি, যদি তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে কিংবা তোমাদের কাছে কেয়ামত এসে যায়, তবে তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৪০)
بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُونَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُونَ إِلَيْهِ إِنْ شَاء وَتَنسَوْنَ مَا تُشْرِكُونَ
‘বরং তোমরা তো তাঁকেই ডাকবে। অতঃপর যে বিপদের জন্যে তাঁকে ডাকবে, তিনি ইচ্ছা করলে তা দুরও করে দেন। যাদেরকে অংশীদার করছ, তখন তাদেরকে ভুলে যাবে।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৪১)
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ - وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاء وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ
‘তিনিই তোমাদের বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্য এবং আশার জন্য এবং উপেক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা। তাঁর (তাহমিদ) প্রশংসা কর। বজ্র এবং ফেরেশতারাও তার ভয়ে (তাসবিহরত)। তিনি বজ্রপাত করেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি তা (বজ্রপাত) দ্বারা আঘাত করেন। এরপরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।’ (সুরা রাদ : আয়াত ১২-১৩)
وَلَقَدْ أَرْسَلنَا إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ
আর আমি আপনার আগের উম্মতদের প্রতিও পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি মিনতি করে (আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়)।’ (সুরা আনআম : ৬:৪২)
فَلَوْلا إِذْ جَاءهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُواْ وَلَـكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আজাব এলো, তখন কেন কাকুতি-মিনতি করল না? বস্তুতঃ তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল, যে কাজ তারা করছিল।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৪৩)
অন্য আয়াতেও আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে কাকুতি মিনতি করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে-
وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ
আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনতিও করল না।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৭৬) অর্থাৎ তারা যদি আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করতো ক্ষমা প্রার্থনা করতো তবে আল্লাহ তাআলা আজাব-গজবের পাকড়াও থেকে মানুষকে হেফাজত করতেন।
উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে তার নিদর্শন ও আজাব বলে ইঙ্গিত করেছেন। এসব অবস্থায় তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও সাহায্যের আহ্বান ও কাকুতি মিনতির কথা বলেছেন। যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর সাহায্য পাবেন। আর যারাই এর বিপরীত কাজ করবেন, তারাই হবেন ক্ষতিগ্রস্ত।
মানুষের করণীয়
কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়ার পর প্রথম কাজই হচ্ছে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবেই আল্লাহ এসব দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করবেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাস্তব জীবনে এসব মুহূর্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জুমআর দিন দারুল কাজা (বিচার করার স্থান)-এর দিকের দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। এ সময় আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। লোকটি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল-
‘হে আল্লাহর রাসুল! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লার কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে (৩ বার) দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا
‘হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মেঘ নেই, মেঘের সামান্য টুকরোও নেই। অথচ সালআ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোনো ঘরবাড়িও ছিল না।
তিনি বললেন, হঠাৎ সালআর ওই পাশ থেকে ঢালের মত মেঘ উঠে এল এবং মধ্য আকাশে এসে ছড়িয়ে পড়লো। অতঃপর প্রচুর বর্ষণ হতে লাগল। আল্লাহর কসম! আমরা ৬ দিন সূর্য দেখতে পাইনি।
এরপরের জুমআয় সে দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। লোকটি তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল-
‘হে আল্লাগর রাসুল! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দুই হাত তুলে (এভাবে) দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বেরিয়ে রোদে চলতে লাগলাম।’ (রাবী) শরিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম- এ লোকটি কি আগের সেই লোক? তিনি বললেন, আমি জানি না।’ (বুখারি)
ঝড়-বজ্রপাত থেকে মুক্ত থাকার দোয়া
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, কেউ যদি এমন কোনো ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস; তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিপরীতে দেখতে পায় তখন এভাবে দোয়া করবেন-
اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা- ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর (ঝড়-বৃষ্টির কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ ও যা নিয়ে এসেছে, তার কল্যাণসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অকল্যাণ থেকে, এর মধ্যকার অকল্যাণ থেকে এবং যা নিয়ে তা এসেছে, তার অমকল্যাণসমূহ থেকে।’
২. হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে-
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ
উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।’
সে বজ্রপাতের আঘাত থেকে মুক্ত থাকবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২৯২১৩)
৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এ আয়াত পাঠ করতেন-
سُبْحَانَ الَّذِىْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’
অর্থ: ‘পবিত্র সেই মহান সত্তা প্রশংসা যিনি পানিভরা মেঘ উঠান। মেঘের গর্জন তার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং তার ফেরেশতারাও তাঁর ভয়ে কম্পিত হয়ে তাঁর তাসবিহ পাঠ করে।’ (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)
৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন বা বিদ্যুতের চমক দেখতেন তখন সঙ্গে সঙ্গে বলতেন-
اَللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَ لَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَ عَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করো।’ (তিরমিজি ৩৪৫০)
আবার বৃষ্টিতে উপকার পাওয়ার দোয়া
যে কোনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের প্রথম কাজ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও সাহায্য চাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে এ কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি এভাবে কল্যাণ কামনা করতে বলেছেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا - اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا - اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ; আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ; আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।' (বুখারি)
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।'
আল্লাহর আজাব থেকে মুক্তির উপায়
পাশাপাশি বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ইসতেগফার করা জরুরি। কেননা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আজাব নাজিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আজাব দেবেন না।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৩৩)
প্রাকৃতিক দুর্যোগকে গালাগালি না করা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়সহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে গালাগালি না করা। অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে মানুষ এগুলোকে গালাগাল দিতে থাকে। অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি হলে মানুষ 'অমুক-তমুক' বৃষ্টি-ঝড় বলে গালাগাল দিতে থাকে। মারাত্মক ধরনের বাজে মন্তব্য করে থাকে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, বায়ু (বাসাত) আল্লাহর অন্যতম রহমাত। তা কখনো শান্তি বয়ে আনে আবার কখনো আজাব নিয়ে আসে। সুতরাং বাতাস প্রবাহিত হতে দেখলে তোমরা তাকে গালাগালি দিবে না, বরং আল্লাহর কাছে এর কল্যাণ চাইবে এবং তার অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি প্রার্থনা করবে।’ (আবু দাউদ)
কারণ মানুষ যদি এমন কোনো কিছুকে গালি দেয়, যেগুলো গালি পাওয়ার উযুক্ত নয়, সেগুলোকে গালি দিলে, সে গালি নিজের দিকে ফিরে আসে।
অতএব যত বৃষ্টি, তুফান বা ঘূর্ণিঝড় হোক- এগুলোকে গালি দেয়া যাবে না। হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী যত বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক না কেন, আল্লাহর কাছে তার ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া করা। এর রহমতের কামনায় দোয়া করা মুমিনের কাজ।
ঝড়-বজ্রপাতকে গজব না বলা
প্রবল ঝড়-জলোচ্ছ্বাস শুরু হলেই অনেকে বলে থাকে যে, আল্লাহর গজব শুরু হয়েছে। এ সব কথা না বলা। কিংবা অমুক ব্যক্তির কারণে দেশে বা অঞ্চলে গজব নাজিল হয়েছে, এসব না বলা। কারণ আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন যে, এর মধ্যে কি রয়েছে। বরং কুরআনের সে দোয়া করা। আল্লাহ বলেন-
رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।' (সুরা দুখান : আয়াত ১২)
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।'
বিপদগ্রস্তদের জন্য দোয়া ও সহযোগিতা করা
যারা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে, তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাদের প্রতি ইহসান করা। যার যার সমর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা প্রত্যেকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাদের সহযোগিতায়ও থাকবে উত্তম প্রতিদান। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাও এমন-
هَلْ جَزَاء الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ
সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কী হতে পারে? (সুরা আর-রাহমান : আয়াত ৬০)
বিপদগ্রস্তদের সহযোগিতায় উৎসাহ ও নির্দেশ দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যারা দুনিয়াবাসীর প্রতি অনুগ্রহ করবে তাহলে আসমানবাসী তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’
সুতরাং যারা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত। অসহায় অবস্থায় আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবন-যাপন করছে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া ঈমানের একান্ত দাবি।
বিশেষ করে
এসব ঝড়-বজ্রপাতে বেশি বেশি কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য ও অবস্থার কথা স্মরণ করা। দুনিয়ার ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বজ্রপাত ও ভূমিকম্প যদি এমন ভয়াবহ রূপ নেয় তবে পরকালের কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের কী অবস্থা হতে পারে; তা চিন্তা-ভাবনা করার উপযুক্ত সময়ও এটি।
তাই কেয়ামত, আখেরাত ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং তাওবাহ-ইসতগেফারের পাশাপাশি আল্লাহর বিধি-বিধানের অনুসরণ ও অনুকরণ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব ঝড়-বজ্রপাত-জলোচ্ছ্বাস-ভূমিকম্পসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।