বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এখন এক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। আন্তরিক সেবা ও বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের কারণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনে তিন বছর ধরে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদায় রয়েছে বাংলাদেশ। শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের ১২২টি দেশের মধ্যে ৭ হাজার ৪৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় ৩৪ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬ হাজর ৯২৪ জন মিলিটারি (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য)। বাকিরা হচ্ছেন ফরমড পুলিশ, মিশন এক্সপার্ট ও স্টাফ অফিসার। এর আগেও সামরিক ও পুলিশ শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক বছর শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে ছিল। এর আগে ও পরে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী প্রথম সারির দেশগুলোর তালিকায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। গত ৩৪ বছর ধরে ব্লু হেলমেট পরে আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ দেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। বর্তমানে সেন্ট্রাল আফ্রিকা, মালি, সাউথ সুদান, কঙ্গো, সাইপ্রাস, কসবো, লেবাননসহ ১৪টি দেশে শাস্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। সবকটি মিশনেই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুদান ও সাউথ সুদানের মধ্যবর্তী সংঘাতপূর্ণ আবেই অঞ্চলে ১০টি দেশের ৪ হাজার ১৯০ জন শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে জাতিসংঘ। এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে ৫০৮ জন শান্তিরক্ষী। বিশ্বের যে কোনো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রথমেই ডাক পড়ে অদম্য সাহসী ও অনন্য পেশাদারি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের। বিশ্বশান্তি রক্ষায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১৪৪ জন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। পুলিশ বাহিনীর ২৩ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন বিশ্বশান্তি রক্ষায়। বাংলাদেশের এই গৌরবোজ্জ্বল স্বীকৃতি সামনে রেখে আজ ২৯ মে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের ৭৫তম বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সব শান্তিরক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বিশ্বশান্তি রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষী সদস্যদের আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে শান্তি ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আমি গর্বভরে স্মরণ করছি এবং শান্তিরক্ষা-মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি নিহত শান্তিরক্ষীদের যারা বিশ্বশান্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জন দিয়ে বিশ্বদরবারে দেশের পতাকাকে সমুন্নত করেছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে ইরাকে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সূচনা। এরপর দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বারবার শীর্ষ অংশগ্রহণকারী শান্তিরক্ষীর দেশের তালিকায় উঠেছে।
দিবসের কর্মসূচি : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আজ সকালে শহীদ শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে এবং সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটআত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এর আগে সকালে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৩’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ টকশো প্রচারিত হবে। শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত হবে।