ফের উত্তপ্ত মণিপুর, পুলিশের গুলিতে নিহত অন্তত ৪০


আন্তর্জাতিক ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 28-05-2023

ফের উত্তপ্ত মণিপুর, পুলিশের গুলিতে নিহত অন্তত ৪০

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ফের নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার গভীর রাতে মনিপুরের কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছেন বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানিয়েছেন।

রোববার দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিগত সহিংসতায় বিধ্বস্ত এই রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্রোহীদের সাথে মণিপুর পুলিশের কমান্ডোদের সংঘর্ষ হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, গুলিতে ৪০ সন্ত্রাসী মারা গেছেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে এম-১৬, একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল ও স্নাইপার বন্দুক ব্যবহার করছেন। তারা অনেক গ্রামে ঢুকে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্ত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। রাতভর অভিযানে আমরা প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যার খবর পেয়েছি।

মণিপুরকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে কেন্দ্রের সহায়তায় রাজ্য সরকারের এই লড়াই চলছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। বিদ্রোহীরা শনিবার রাত ২টার দিকে একযোগে ইম্ফল উপত্যকা ও এর আশপাশের পাঁচটি এলাকায় আক্রমণ করেছেন।

যেসব এলাকায় সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়েছেন, সেসব এলাকা হলো সেকমাই, সুগনু, কুম্বি, ফায়েং এবং সেরু। আরও কিছু এলাকায় এখনও বন্দুকযুদ্ধ চলছে এবং রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলছে, সেকমাইয়ে বন্দুকযুদ্ধের অবসান ঘটেছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (আরআইএমএস) চিকিৎসকরা টেলিফোনে এনডিটিভিকে বলেছেন, ফায়েং এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে আহত ১০ জনকে তারা চিকিৎসা দিয়েছেন।

বিষেনপুরের চান্দনপোকপি এলাকায় খুমানথেম কেনেডি (২৭) নামের একজন কৃষক গুলিতে নিহত হয়েছেন। তার শরীরে একাধিক গুলির আঘাত শনাক্ত করা হয়েছে। গোলাগুলির এই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, গত দুদিনে ইম্ফল উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সহিংস আক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা সুপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে।

প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মণিপুর রাজ্যের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাঝে উত্তেজনা চলছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কুকি উপজাতিরা তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে ৩ মে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ ঘিরে ওই দিন পার্বত্য এই রাজ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই সহিংসতায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এতে কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলনও হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।

সম্প্রতি ভারতের হাই কোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাই কোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।

এদিকে, জাতিগত সহিংসতায় বিধ্বস্ত ভারতের উত্তরের এই রাজ্যে আগামীকাল সফরে যাচ্ছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি সহিংসতায় জড়িত মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে শান্তি বজায় রাখার এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডেও রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গতকাল দুদিনের সফরে মণিপুরে যান।

সহিংসতার কারণে গত ২৫ দিনের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট সংযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে মণিপুর।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]