অনেকে একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়ায়। কারও ব্যক্তিগত এসব দোষ বা জীবনের কোনো ঘটনা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করে দেয়। সত্য হলেও এসব দোষ বা ঘটনা বলা কি গুনাহ? ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে?
কারণ যা-ই হোক, একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়ানো বা কারও ব্যক্তিগত দোষ বা ঘটনা প্রকাশ করা ঘৃণিত ও গর্হিত কাজ। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে শুধু নিকৃষ্টই নয় বরং গুনাহের কাজ। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআনুল কারিমে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيراً مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা গুনাহ। আর গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পেছনে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত: আয়াত ১২)
কারও কোনো দোষা বা ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি কী? এ নিয়ে একাধিক হাদিসে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাহলো-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তা-ই তার পেছনে আলোচনা করা।’ বলা হল-‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গিবত হবে?)’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গিবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।’ (মুসলিম)
২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন আমাকে মেরাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি প্রশ্ন করলাম, হে জিবরিল! ওরা কারা? তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের গোশত খেত (গিবত করতো/অন্যের দোষ বলে বেড়াতো) ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।’ (আবু দাউদ)
৩. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ব্যতিব্যস্ত হয়ো না এবং কারও গোপন তথ্য ফাঁস করো না। কেননা তোমাদের পেছনে রয়েছে (কেয়ামতের) ভীষণ কষ্টদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী বিপদসমূহ।’ (আদাবুল মুফরাদ)
৪. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তুমি যখন তোমার সঙ্গীর দোষ চর্চা করতে ইচ্ছা করে তখন তোমার নিজের দোষ স্মরণ কর।’ (আদাবুল মুফরাদ)
যে কারণে দোষ প্রকাশ করবেন না
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার গুপ্ত (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দেবে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দেবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
তাই কোনোভাবেই কারও গোপন কথা, ঘটনা বা দোষ প্রকাশ করা কিংবা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো ঘৃণিত ও গুনাহের কাজ। তাই কারো গুনাহের কথা জনসম্মুখে বলা উচিত নয়। হাদিসে আরও এসেছে-
হজরত ইকরিমা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার মনে নেই, হয় হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু অথবা তার চাচাতো ভাই একে অপরকে আহারের দাওয়াত দিলেন। এক বাঁদী তাদের সামনে (আহার পরিবেশনের) কাজ করছিল। তাদের একজন তাকে বলেন, হে যেনাকারিনী! তখন অপরজন বলেন, থামো। সে যদি দুনিয়াতে তোমাকে (এই অপবাদের) শাস্তি না দিতে পারে, তবে আখেরাতে অবশ্যই তার শাস্তি দেবে। তিনি বলেন, আপনি কি মনে করেন, ব্যাপারটি যদি তাই হয়? অপরজন বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কথা ও অশ্লীলতার বাহককে পছন্দ করেন না। ইনি ছিলেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু; যিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীল কথা ও অশ্লীলতার বাহককে পছন্দ করেন না।’ (আদাবুল মুফরাদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্যের দোষ বলে বেড়ানো বা গোপন বিষয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।