সুস্থতার জন্য শারীরিক ব্যায়াম সুন্নত


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 19-05-2023

সুস্থতার জন্য শারীরিক ব্যায়াম সুন্নত

নিজের কাজ নিজেই করতেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি পরিশ্রম করতেন, ব্যবসা করতেন, ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। এমনটিই তিনি পছন্দ করতেন। বাস্তব জীবনেও তিনি সুস্বাস্থ্য, সুস্থতা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ায় নিজেই পরিশ্রম করতেন। সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতায় পরিশ্রম ও ব্যয়াম করা তাঁর সুন্নত, যা উম্মতের জন্য আদর্শ ও অনুপ্রেরণা।

এ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাস্তব জীবনের অনেক ঘটনা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। নবিজির সেসব ঘটনাসমূহ কী?

সব সময় ধৈর্য, সহনশীল, পরিশ্রম, কষ্ট ও বীরত্বপূর্ণ জীবনযাপন করা সুন্নত। সব ধরনের বিপদ সহ্য করার এবং কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থার মোকাবিলা করার অভ্যাসও নবিজির সুন্নত। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সাদাসিধেভাবে বীরত্বের জীবন যাপনের চেষ্টা করতেন। আবার আরাম প্রিয়, পরিশ্রমবিমুখ, কোমলতা প্রিয়, অলস, সুখপ্রত্যাশী, আনমনা ও দুনিয়া পূজারি হতে নিরুৎসাহিত করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত-

১. আরাম থেকে বিরত থাকা: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হজরত মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামেনের গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠান, তখন তাকে উপদেশ দেন যে, হে মুয়াজ! আরাম প্রিয়তা থেকে বিরত থাকবে! কেননা আল্লাহর বান্দাহগণ আরাম প্রিয় হয় না।' (মিশকাত)

২. স্বাভাবিক জীবনযাপন করা: হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সাদাসিধে (স্বাভাবিক) জীবন-যাপন করা ঈমানের নির্দেশ।’ (আবু দাউদ)

৩. পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় সাদাসিধে ও বীরত্বের জীবনযাপন করতেন এবং সব সময় নিজের বীরত্বপূর্ণ শক্তিকে রক্ষা করা ও বর্ধিত করার চেষ্টা করতেন। তিনি সাঁতার কাটতেও পছন্দ করতেন। কেননা, সাঁতার কাটায় শরীরের উত্তম ব্যয়াম হয়। একবার এক পুকুরে তিনি ও তাঁর কিছু সাহাবি সাঁতার কাটতে ছিলেন, তিনি সাঁতারুদের প্রত্যেকের জুড়ি ঠিক করে দিলেন যে, প্রত্যেককে সাঁতার কেটে তার জুড়ির কাছে পৌঁছবে। সুতরাং তাঁর জুড়ি নির্বাচিত হলেন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি সাঁতার কেটে জুড়ি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত পৌঁছে তার ঘাড় ধরে ফেললেন।

৪. বাহনের পরিচর্যা করা: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারির জন্য বাহন হিসেবে ঘোড়াকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। নিজেই নিজের ঘোড়ার পরিচর্যা করতেন। নিজের জামার আস্তিন দ্বারা ঘোড়ার মুখ মুছে পরিষ্কার করে দিতেন। ঘোড়ার গ্রীবাদেশের কেশরসমূহকে নিজের পবিত্র আঙুল দ্বারা ঠিক করে দিতেন এবং বলতেন, কেয়ামত পর্যন্ত এর কপালের সাথে সৌভাগ্য জড়িত।

৫. কাজ শেখা: হজরত ওকবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তীর চালানো শেখো, ঘোড়ায় আরোহন করো, তীর নিক্ষেপকারীগণ আমার কাছে ঘোড়ায় আরোহনকারীদের থেকে অধিক প্রিয় এবং যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ করা শেখার পর ছেড়ে দিলো, সে আল্লাহর নেয়ামতের অমর্যাদা করলো।’ (আবু দাউদ)

৬. দায়িত্ব পালন করা: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যে ব্যক্তি বিপদের সময় মুজাহিদকে পাহারা দিল তার এ রাত ‘লাইলাতুল কদর’-এর রাত অপেক্ষা অনেক উত্তম।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)

৭. কাজকে ভয় না করা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম জীবন ঐ ব্যক্তির; যে নিজের ঘোড়ার লাগাম ধরে আল্লাহর পথে দ্রুতবেগে দৌড়ে চলে, কোথাও বিপদের কথা শুনলে ঘোড়ার পিঠে আরোহন করে দৌড়ে যায় এবং হত্যা ও মৃত্যু থেকে এমন নির্ভীক হয়- যেন সে মৃত্যুর খোঁজেই আছে।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের বাস্তবায়ন করা। সব সময় নিজেদের ধৈর্য, সহনশীল, পরিশ্রমী, কষ্ট ও বীরত্বপূর্ণ কাজে নবিজির ‍সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাতি জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।



Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]