মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর এ মর্মে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে, তারা সৎ কাজের আদেশ দেবে আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। এ কাজকেই তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাদের জন্য শুধু শাস্তিই নয় বরং তারা দোয়া করলেও তাদের কোনো দোয়া কবুল করা হবে না। হাদিসের বর্ণনায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নামে শপথ করে বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতে থাকো। যদি তা না করো তবে দ্রুতই আল্লাহ তাআলা পাপীদের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের সবার জন্যই শাস্তি (আজাব) নাজিল করবেন। তখন তোমরা দোয়া করলেও কবুল হবে না।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মারেফুল কোরআন)
এ কারণেই অন্য হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করতে এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ মন্দ কাজ হতে দেখে, তবে তা (মন্দ কাজ) হাত ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিরোধ করো। এতে সক্ষম বা সামথ্র্য না হলে, মুখে বাঁধা দেবে। আর যদি তা-ও সম্ভব না হয়, তবে মনে মনে কাজটিকে ঘৃণা করবে। আর এটি )এ মন্দ কাজ বন্ধে নিরবে নিরবে সমাজকে তৈরি করতে হবে। নিরবে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর নিরবে প্রতিরোধ আন্দোলন বা ঘৃণা করা) ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।’ (মুসলিম, মিশকাত)
কোরআনুল কারিমের আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে এ কথা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
১. کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ ؕ وَ لَوۡ اٰمَنَ اَهۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّهُمۡ ؕ مِنۡهُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ اَکۡثَرُهُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত; যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনতো, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হতো। তাদের কতক ঈমানদার। তাদের অধিকাংশই ফাসিক।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১০)
২. وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের (সৎ কাজের) প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে।’ (সুরা আল ইমরান- আয়াত ১০৪)
যারা আল্লাহ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের ব্যতিক্রম. তাদের জন্য রয়েছে কঠোর আজাব বা শাস্তি। সে ঘোষণাও আল্লাহ একই সঙ্গে দিয়েছেন এভাবে-
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ
‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৫)
মনে রাখতে হবে
যারা নিজেদের ঈমানদার ও রাসুলের উম্মত হিসেবে দাবি করবে কিন্তু কোরআন-সুন্নাহর এ নির্দেশনা ‘সৎ কাজের আদেশ দেবে না; অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে না’; তাদের জন্য আল্লাহর আজাব বা শাস্তি সুনিশ্চিত। ‘আর তাদের কোনো দোয়াও কবুল হবে না’ এ মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি-
‘সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতে থাকো। যদি তা না করো তবে দ্রুতই আল্লাহ তাআলা পাপীদের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের সবার জন্যই শাস্তি (আজাব) নাজিল করবেন। তখন তোমরা দোয়া করলেও কবুল হবে না।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মারেফুল কোরআন)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআন-সুন্নাহর হক আদায় করে অন্যায়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা ও ন্যয়ের প্রতি যথাযথ সমর্থন দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। দুনিয়ার লাঞ্ছনা, পরকালের শাস্তি ও নিজেদের উত্তম প্রার্থনাগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল করানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নিজেদের একান্ত চাওয়াগুলো কুবল হওয়ার প্রত্যাশায় যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময় /এএইচ