যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ দূর করতে চায় বাংলাদেশ


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 16-05-2023

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ দূর করতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় যুক্তরাষ্ট্র। এখন দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে শ্রম আইন ও নীতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আগামী দিনের দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভর করবে এর ওপর। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেনডেন লিঞ্চ। আগামী ২০ থেকে ২৪ মে ঢাকা সফর করবেন তিনি। তাঁর এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের স্থানগুলো দূর করতে চায় বাংলাদেশ।

সফরকালে শ্রম, বাণিজ্য, কৃষি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে ব্রেনডেন লিঞ্চের। তাঁর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ছয়-সাতজনের একটি প্রতিনিধি দলও থাকবে।

সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, ব্রেনডেন লিঞ্চের সঙ্গে একটি বৈঠক ঠিক করা হয়েছে। বৈঠকে দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দু’দেশের বিদ্যমান বিষয়গুলো, যেমন– শ্রম পরিস্থিতি, কৃষি, তুলা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এটি একটি সৌজন্য বৈঠক।

অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। শ্রম পরিবেশ ও মান আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে আসার জন্য ওয়াশিংটন এক যুগের বেশি সময় ধরে তাগাদা দিয়ে আসছে। এর পর তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি স্থগিত করে দেশটি। তৈরি পোশাক খাতে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তায় অগ্রগতি হলেও সংগঠনের স্বাধীনতা এবং দরকষাকষির অধিকার, জোরপূর্বক শ্রম, শিশুশ্রম, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, পেশার ক্ষেত্রে বৈষম্য, শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, শ্রম ইউনিয়ন করার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য শর্তাবলি, শ্রমিকের কর্মঘণ্টাসহ সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে দেশটির। এ বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগগুলো দূর করতে চায় বাংলাদেশ।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ অনেক দিনের। এ নিয়ে একটি সমাধানে আসতে চায় ঢাকা। সম্প্রতি দুই দেশের অংশীদারিত্ব সংলাপে শ্রম খাতের অগ্রগতিগুলো তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে তাদের আরও বিস্তারিত জানাতে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রেনডেন লিঞ্চের সঙ্গে মূল বৈঠকটি হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের। এতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের মান অনুযায়ী বাংলাদেশে শ্রম আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাইবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, দু’দেশের আগামীর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নির্ভর করবে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির ওপর। হঠাৎ করে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উদ্বেগের বিষয়গুলো শোধরে নিতে বাংলাদেশকে সময় দিতে চায় দেশটি। যেমনটি করেছিল জিএসপি বাতিলের আগে। শ্রম পরিস্থিতির অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজের সফর।

ব্রেনডেন লিঞ্চ ঢাকার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নকল পণ্য পাঠানোর বিষয়টিও তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে মেধাস্বত্ব আইন নিয়েও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন থেকে এ বিষয়ে ঢাকাকে জানানো হয়েছে। তবে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকার কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বের হওয়ার পরও এ সুবিধা আরও কিছুদিন বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ঢাকার পক্ষ থেকে।

প্রতিবছর বাংলাদেশের শ্রমিকের অধিকার নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ প্রকাশিত শিশু ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, শ্রম খাতের সংস্কারে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে মাঝারি। তবে বাংলাদেশজুড়েই এখনও গার্মেন্ট খাতে শ্রমিকরা তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার। বিপজ্জনক এ খাতের শ্রমিক নির্যাতনের ব্যাপকতা সামনে আসে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর। এর পর কিছু সংস্কার হলেও বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক শ্রম, আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গিয়ে কাজ করানো, জোরপূর্বক ওভারটাইম এবং ক্ষতিপূরণ আটকে রাখার মতো ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে সুপারভাইজারদের মাধ্যমে কর্মীরা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারার কারণে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা হুমকি ও জরিমানার মুখে অনিচ্ছাকৃতভাবে কাজ করছেন বলে সমালোচনা করা হয় প্রতিবেদনে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]