সমবয়সিদের চেয়ে তথাকথিত ভাবে একটু আলাদা বছর এগারোর অধারা পেরেজ় স্যানচেজ়। চিকিৎসা শাস্ত্র বলছে তার অটিজ়ম-এর সমস্যা রয়েছে। সেই সূত্র ধরে সমাজ তার ‘বোধবুদ্ধি’ নিয়ে যতই প্রশ্নচিহ্ন ছুড়ে দিক না কেন, এই বয়সেই স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শেষ করে অধারা প্রমাণ করে দিয়েছে যে বুদ্ধিমত্তায় সে কোনও অংশে কম যায় না! বরং পিছনে ফেলে দিতে পারে তাবড় নামগুলিকেও। কারণ তার ‘ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট’ বা আইকিউ স্কোর বলছে সেই মানদণ্ডে অধারা ছাপিয়ে গিয়েছে কিংবদন্তি বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং স্বনামধন্য পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংকেও!
এ ভাবেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে মেক্সিকো সিটির অধারা। তার আইকিউ স্কোর-১৬২। যা স্টিফেন হকিংয়ের পাওয়া নম্বর (১৬০)-কে ছাপিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে আইনস্টাইনের আইকিউ ১৬০-এর কাছাকাছি। ফলে সে দিক থেকে দেখতে গেলে অধারা তাঁকেও পেরিয়ে গিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এই বালিকাই প্রথম তেমনটা নয়। আগেও আইনস্টাইনের চেয়ে বেশি আইকিউ স্কোর পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে অনেকেরই।
পড়াশোনায় বরাবরই তুখড় অধারা, জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলি। মাত্র সাত বছর বয়সেই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আসে সে। এর পর মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকো’ থেকে সিস্টেম্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর পূর্ণের কৃতিত্ব। অধারার স্পেশ্যালাইজ়েশনের বিষয় ছিল অঙ্ক। বর্তমানে মেক্সিকান স্পেস এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত সে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মহাকাশ গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সে। এত কিছু সত্ত্বেও ঠিক মতো কথা বলতে না-পারার জন্য র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছে অধারাকে। এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর মা। তাঁর কথায়, মাত্র তিন বছর বয়সে প্রথম অটিস্টিক হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় অধারার মধ্যে। তার পর কমপক্ষে বার তিনেক স্কুল পাল্টাতে হয়েছে তার। ওই মহিলা আরও বললেন, ‘‘শিক্ষিকারা একেবারেই সহানুভূতিশীল ছিল না ওর প্রতি। তাঁরা বলতেন, ও একটা কাজ ঠিক মতো শেষ করতে পারলে হয়! এ সবের ফলে আস্তে আস্তে অধারা নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল। সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে চাইত না, ওর নিজেকে আলাদা মনে হত।’’
তবে সেই অন্ধকার সময় এখন অনেকটাই পিছনে ফেলে এসেছে অধারা। তার দৃষ্টি এখন আটকে মঙ্গলে। মহাকাশচারী হয়ে এখন সেখানেই উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছে সে।