পুরুষরা মসজিদে জামাতে নামাজ পড়বে, এটাই নিয়ম। তারপরও মাঝে মাঝে কারণবশতঃ ঘরে নামাজ পড়তে হয়। এসব সময় স্বামী-স্ত্রী একত্রে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারবে কি? আবার স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে জামাতে নামাজ পড়ার নিয়মই বা কী?
হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারবে। যদি জামাত ছাড়া আলাদা আলাদা নামাজ পড়া হয়। ব্যক্তিগতভাবে নামাজ পড়ায় পাশাপাশি দাঁড়ানোয় কোনো ক্ষতি নেই। তবে উভয়ে মিলে জামাতে নামাজ পড়লে তখন স্ত্রীকে অবশ্যই পেছনের কাতারে দাঁড়াতে হবে, পাশাপাশি দাঁড়ানো যাবে না। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৭২, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ২/২২৮, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত ৩/৪৫৪)
স্বামী-স্ত্রীর জামাতের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- স্ত্রীকে স্বামী নিজের এক কাতার পেছনে দাঁড় করাবে। স্ত্রী স্বামীর বরাবর (পাশাপাশি) দাঁড়াবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমাদের ঘরে আমি এবং এক এতিম হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে (জামাতের সঙ্গে) নামাজ পড়েছি। আর আমাদের পেছনে আমার মা উম্মে সুলাইম (ইকতিদা করেন)।’ (বুখারি)
উল্লেখ্য যে, উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাহরাম ছিলেন।
কখনো মসজিদের জামাত না পেলে সেক্ষেত্রে একাকী নামাজ না পড়ে বাসায় স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়াই উত্তম। এক্ষেত্রে দাঁড়ানোর পদ্ধতি হল, স্ত্রী স্বামীর বরাবর হয়ে দাঁড়াবে না বরং একটু পিছনে দাঁড়াবে। আর নাবালেগ শিশু থাকলে তারা ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৩)
এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনাও রয়েছে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ صَلَّى بِهِ وَبِأُمِّهِ أَوْ خَالَتِهِ . قَالَ فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ وَأَقَامَ الْمَرْأَةَ خَلْفَنَا
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তাঁর ডান পার্শ্বে দাঁড় করালেন এবং নারীদে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন।’ (মুসলিম ১৩৭৭)
তবে এমনটি যেন না হয় ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জামাতের অজুহাতে মসজিদে নামাজের জামাত তরক করা যাবে না। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিয়মিত জামাত করা যাবে না। কেননা মসজিদে নামাজের জামাতের গুরুত্বের ব্যাপারে একাধিক হাদিসের মাধ্যমে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন- এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَمِعَ الْمُنَادِيَ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ ” . قَالُوا وَمَا الْعُذْرُ قَالَ خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ ” لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِي صَلَّى
‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শোনা সত্ত্বেও কোনোরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামাতে নামাজ আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকি) নামাজ কবুল হবে না। (অর্থাৎ তার নামাজকে পরিপূর্ণ নামাজ হিসেবে গণ্য করা হবে না)। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ওজর কী? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা।’ (আবু দাউদ ৫৫১)