নানা কারণে মানুষের মন খারাপ হতে পারে। সব সময় মন ভালো থাকে না। তা হতে পারে, আর্থিক দুরবস্থা, বিপদ-মসিবত, অসুস্থতা, প্রতারণা কিংবা মানসিক কোনো কষ্ট। এসব কারণে মন খারাপ হলে ভেঙে পড়া যাবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষকে কষ্টনির্ভর করেই সৃষ্টি করেছেন। তাই কোনো কারণে মন খারাপ হলে কী করবেন? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অবস্থায় কী করতেন?
মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ। তিনি মানুষকে এসবের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। তাই মুমিন কখনও সুখের সময় গা ভাসিয়ে দিতে পারে না আবার দুঃখের দিনে আশাহত হতে পারে না। মন খারাপ হলে করণীয় কী তা নির্ধারণে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো- ভেঙে পড়া যাবে না। কারণ পৃথিবীটাই আসলে সুখের জায়গা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡ کَبَدٍ
‘অবশ্যই আমি মানুষকে কষ্টনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা বালাদ ৪)
মন খারাপ হলে কী করতে হবে, এ সম্পর্কে নবি-রাসুল ও সাহাবাদের জীবন থেকেই রয়েছে মানুষের জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা। তাহলো-
১. হজরত নুহ আলাইহিস সালামের অনুপ্রেরণা
কোনো কারণে পরিবার ও সন্তানকে সৎপথে আনার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখবেন, হজরত নুহ আলাইহিস সালামের কথা। তিনি তার পরিবারের সবাইকে হেদায়েতের পথে আনতে পারেনি। সাড়ে ৯০০ বছর দাওয়াত দিয়ে মাত্র ৮০ জনকে হেদায়েতের পথে আনতে পেরেছিলেন। এ কারণে তাঁকে তিরস্কার করা হবে না। বরং তিনি আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবেন।
২. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের অনুপ্রেরণা
মা-বাবা থেকে কোনো কষ্ট পেলে মন খারাপ করা যাবে না। কারণ আল্লাহর নবি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম নিজ বাবার দ্বারাই আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।
৩. হজরত আদম আলাইহিস সালামের অনুপ্রেরণা
যখন মানুষ নির্জন ও একাকীত্বে ভোগে, তখনও ভেঙে পড়া যাবে না। কারণ হজরত আদম আলাইহিস সালামকে প্রথমে একাকী সঙ্গীবিহীন সৃষ্টি করা হয়েছিল। অথচ তিনিই এ পৃথিবীকে আবাদ করেছেন।
৪. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপ্রেরণা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি গোত্র ও জাতি দ্বারা অবরুদ্ধ হলেন। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। মন ভীষণ খারাপ? কত দিন ধরে? তিন মাস? চার মাস? এক বছর? না তিনি তিন বছর পর্যন্ত শিআবে আবু তালেবে কাফেরদের দ্বারা অবরুদ্ধ-বেষ্টিত ছিলেন। একসময় খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। এমনও হয়েছে, তিনি ক্ষুধার তাড়নায় গাছের পাতা খেয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট কি এর চেয়েও বেশি? তিনি হলেন মুসলিম উম্মাহর কষ্টের সময়ের অনুপ্রেরণা।
৫. হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের অনুপ্রেরণা
যখন রক্তসম্পর্কীয় কেউ কারো সঙ্গে প্রতারণা করে, তখনও ভেঙে পড়া যাবে না। মনে রাখা জরুরি, হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামও নিজ ভাইদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন। গভীর কূপে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। এরপর জীবনের এক সময়ে এসে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। আবার সেই ভাইদের মুখে নিজের ব্যাপারে মিথ্যা দোষারোপও শুনেছিলেন।
৬. হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের অনুপ্রেরণা
চরম বিপদে চারদিকে অন্ধকার দেখলেও কষ্ট পাওয়া যাবে না। কারণ আল্লাহর নবি হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামও সাগরে মাছের পেটের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ পতিত হয়েছিলেন এবং সেখান থেকে আল্লাহর রহমতে উদ্ধার হয়েছিলেন।
৭. হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের অনুপ্রেরণা
তীব্র অসুস্থতায় মন খারাপ করা যাবে না। কেননা আল্লাহর নবি হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম মানুষের সাধারণ অসুস্থতার তুলনায় অনেক বেশি অসুস্থ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ কুদরতে সুস্থ করেছিলেন।
৮. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার অনুপ্রেরণা
কারো বিরুদ্ধে অপবাদ ও গুজব রটলে ভেঙে পড়া যাবে না। কেননা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিরুদ্ধেও অপবাদ আরোপ করা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে যেভাবে হেফাজত করেছেন। তিনি মানুষকেও সেভাবে হেফাজত করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মন খারাপ অবস্থায় নবি-রাসুল ও সাহাবিদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে সবর ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।