মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ছুরিকাঘাত-প্রাণনাশের হুমকি: ধরাছোয়ার বাইরে সন্ত্রাসীরা


মোজাম্মেল হক রনি, রাজশাহী: , আপডেট করা হয়েছে : 23-02-2022

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ছুরিকাঘাত-প্রাণনাশের হুমকি: ধরাছোয়ার বাইরে সন্ত্রাসীরা

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল প্রামাণিকের সন্তান মো. আবুল হাসেম। শুধু বাবাই নন, বড়ভাই মো. আবুল কাশেমও ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ভাই হয়েও স্ত্রী-সন্তানসহ প্রাণনাশের হুমকিতে রয়েছেন হাশেম। 

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাশেম পেশায় প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। ব্যবসায়িক খাতিরে পরিচয় হয় রঞ্জু শেখ, সাকিল সহ কয়েকজন যুবকের সাথে। পরিচয়ের পর থেকে তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন হাশেমের সাথে। পরবর্তীতে ঠিকাদার হাশেমকে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার করে তারা।

ভুক্তভোগী আবুল হাশেমের অভিযোগ, আমাকে প্রতারিত করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তারা। আমি আমার ঠিকাদারি ব্যবসার পাওনা অর্থ চাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় শালবাগান সিটি গ্যারেজের পেছনে (নয়ন বিডিআর এর বাড়ির সামনে) রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ১২/১৩ জন দূর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীকে এলোপাথারী ভাবে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। একইসাথে আমার কাছে থাকা ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও একটি স্যাংস্যাং নোট-৯ ব্রান্ডের মোবাইল যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৫ হাজার টাকা সেটি কেড়ে নেয়। এঘটনায় আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ দিন শয্যাসয়ী ছিলাম। এরপর গত ৫ জানুয়ারি আমার স্ত্রী বাদী হয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। 

তিনি বলেন, মামলায় ৭জন আসামীর নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৪/৫জনকে আসামী করা হয়। ঘটনায় মামলায় ৭জন আসামীর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে পাচজন আসামী বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি দিচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তার পরিবারের সদস্যদের। তবে এক মাস অতিবাহিত হলেও এই মামলার প্রধান আসামী আব্দুল্লাহ্ আল রঞ্জু শেখ প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও অজ্ঞাত কারনে গ্রেফতার করছেনা চন্দ্রিমা থানা পুলিশ।

মো. আবুল হাসেমের স্ত্রী মোসা. জান্নাতুল ফেরদৌসীর দাবি, আসামীরা জামায়াত-বিএনপির দূর্ধর্ষ ক্যাডার। তাদের নেপথ্যে থেকে সহযোগীতা ও প্রশাসনিক তদবির করছে রাজশাহী মহানগরের প্রভাবশালী সেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা। পেছন থেকে তিনিই কলকাঠি নাড়াচ্ছেন। যার কারণে পুলিশ আসামি না ধরে বলছেন আসামিই খুজে পাচ্ছি না।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আসামিদের প্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি ও তাদের পেছনের নেতারা ক্রমাগতভাবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। মামলা না তুললে আমাদের প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত দেশবিরোধী এসব সন্ত্রাসীদের হাতেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তার সন্তানসহ আমাকে মারা যেতে হবে। 

আবুল হাশেমের বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করার জন্য আমার বাবা ও আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। অথচ দেশবিরোধী শক্তির কাছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আজ মারধর শিকার হচ্ছেন। হুমকি দিচ্ছেন মেরে ফেলার। একারণে তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।

তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে যদি স্বাধীনতার যোদ্ধার পরিবারই সন্ত্রাসী ও দেশবিরোধী শক্তির দ্বারা লাঞ্চিত হয় তবে পুলিশ প্রসাশনের এর চাইতে লজ্জার আর কিছু নেই।

আসামী গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমরান আলী বলেন, আসামি ধরার জন্য যতবার যায় ততবারই আসামি পালায় যায়। এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও বলা হয়েছে। কিন্তু আসামি লাপাত্তা হলে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।

মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সদস্য ও ন্যাশনাল এফএস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, কোন মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী শহরের হউক আর রাজশাহী জেলার বাইরেই হউক না কেন। তার ওপর যদি কেউ অন্যায় কওে এবং সে যে দলেরই বড় নেতা হউক না কেনো। তার নাম মাইকিং করে ভর মজলিশে আমরা বলবো- ‘তাকেই ধরেন এবং দল থেকে বের করেন’। কোনো মুক্তিযোদ্ধার ওপর কোনো প্রকারের অন্যায় আমরা মেনে নেবো না। 

এদিকে আরএমপি পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। বিষয়টি জানার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহীর সময় / এম জি


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]