মণিপুরের জ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি থেকে ফোনে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশপাশের রাজ্য থেকে বিমানে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হচ্ছে অশান্ত রাজ্যটিতে।
এদিকে, রাজ্যের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অলিম্পিক পদকজয়ী বক্সার মেরি কম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে ট্যাগ করে টুইট করেছেন তিনি। কাতর আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমার রাজ্য জ্বলছে। প্লিজ হেল্প।
সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার গভীর রাতে রাজ্যে সেনা মোতায়েন করার পরও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। কার্ফু জারির পরও সংঘর্ষের খবর আসছে। উপজাতি-অনুপজাতি সংঘাতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। বেশ কিছু জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করে এক সরকারি কর্তা বলেন, রাজ্যে দীর্ঘদিন আফসপা বা আর্ম ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট চালু ছিল। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল সেনার নিয়ন্ত্রণে। তখন পুলিশের কাজ ছিল আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাকে সাহায্য করা। এখন চিত্রটা বদলে গিয়েছে। ইম্ফল-সহ রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা থেকে আফসপা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার ভার পুরোপুরি পুলিশের হাতে। কিন্তু পার্বত্য রাজ্যটিতে পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। সেই কারণেই হিংসা করার সুযোগ পাচ্ছে বিবদমান গোষ্ঠীগুলি।
মণিপুরে গত ছয় বছর ধরে ক্ষমতায় বিজেপি। কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপির শাখা-প্রশাখা বিস্তারের পাশাপাশি গোলমালও কমে এসেছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির তৎপরতা কমে আসে। যে কারণে গোটা উত্তর-পূর্ব থেকেই আফসপা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তর-পূর্বে এই প্রথম এত বড় অশান্তির ঘটনা ঘটল।
চলতি সংঘর্ষের মূলে আছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মৈতেই সম্প্রদায়কে আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দিয়ে তফসিলি উপজাতি তালিকা ভুক্ত করতে আদালতের নির্দেশ। মণিপুর হাই কোর্টের গত ১৮ এপ্রিলের ওই নির্দেশের পিছনে আছে মৈতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের আন্দোলন। রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও মৈতেইদের আদিবাসী ঘোষণার উদ্যোগের প্রতিবাদে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুরের ডাকা বুধবারের জমায়েত ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত। তবে এই ইস্যুতে গত দিন পনেরো ধরেই উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যটি অশাম্ত।
সবচেয়ে বেশি হিংসা ছড়িয়েছে চুড়াইচাঁদপুর জেলায়। বুধবার সেখানেই ছাত্রদের মিছিল ঘিরে গোলমালের সূচনা হয়েছিল। দিন দশ আগে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের একটি অনুষ্ঠান বানচাল করে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। আগুন দিয়ে দেওয়া হয় অনুষ্ঠান মঞ্চে। সফর বাতিল করতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল। বুধবার যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে।