বরিশাল শিল্পনগরীতে ১০০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশের দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সদর উপজেলার কাউনিয়া মৌজায় বিসিক শিল্প নগরীর অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন এবং উন্নত এলাকার অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করেই এসব শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকল্পের এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল শিল্পনগরীর বিদ্যমান ৩৭ একরেরও বেশি পরিমাণ জমি উন্নয়ন করে বেসরকারি খাতে ১০০টি এসএমই শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীর বিদ্যমান অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নতি, জিডিপিতে অবদান বাড়বে।
সূত্র আরও জানায়, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীর অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন এবং উন্নত এলাকার অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে নেওয়া প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরে এই ব্যয় বাড়িয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজের মধ্যে রয়েছে ভূমি উন্নয়ন, আবাসিক ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ। প্রকল্প এলাকায় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে। এর বাইরেও শিল্পনগরীর বাউন্ডারি ওয়াল ও শিল্পনগরীর মেইন গেট, পুকুরপাড়ে আরসিসি প্যালাসাইডিং, রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ডাম্পিং ইয়ার্ড ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। গভীর নলকূপ, পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন, বিদ্যুৎ লাইন ও সোলার প্যানেলও স্থাপন করা হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। কিন্তু প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালীন প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পূর্ত কাজে বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের ১৩টি পূর্ত কাজের মধ্যে তিনটি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১০টি কাজের মধ্যে তিনটির ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পটি ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (১৮ এপ্রিল) একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। এর ফলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিল্প মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, জিডিপিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে প্রকল্পটি অবদান রাখবে। প্রকল্পের আওতায় বরিশাল শিল্পনগরীর বিদ্যমান ৩৭ দশমিক ৫৯ একর ভূমি উন্নয়ন করে বেসরকারি খাতে ১০০টি এসএমই শিল্প ইউনিট স্থাপনের ফলে এ এলাকার মানুষের জন্য নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে এ অঞ্চলের দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক হবে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) প্রকল্পটির অনুকূলে ১৬ কোটি টাকা (সম্পূর্ণ জিওবি) তারকা চিহ্নসহ বরাদ্দ রয়েছে।
কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, যেহেতু প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ এবং ইতোমধ্যে ২৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে (যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪১ দশমিক ১৯ শতাংশ)। অবশিষ্ট কাজ প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেহেতু প্রকল্পটি সুষ্ঠু বাস্তবায়নের স্বার্থে আইএমইডি প্রদত্ত নিম্নরূপ শর্তসমূহ প্রতিপালন সাপেক্ষে ‘বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীর অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন এবং উন্নত এলাকার অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থবার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার জানিয়েছেন, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। আশা করছি এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে। এর মধ্য দিয়ে বরিশালে বিসিক এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে মানুষের দারিদ্র্য কমে প্রকল্পটি দেশের অর্থনীতি ও জিডিপিতেও অবদান রাখবে।