রক্তস্রত ছেলের যেতে পারলেন না মৃত্যুঞ্জয়ের বাবার


সুমাইয়া তাবাস্সুম: , আপডেট করা হয়েছে : 29-04-2023

রক্তস্রত ছেলের যেতে পারলেন না মৃত্যুঞ্জয়ের বাবার

বয়স ৬৫ বছর। কাঁধে একটা গামছা নিয়ে আছেন। তা দিয়েই চোখের জল মুছছেন শ্রীকৃষ্ণ বর্মণ। তাঁরই ৩৩ বছর বয়সি ছেলে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বৃহস্পতিবার। সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা মনে করে চোখের ধল ধরে রাখতে পারছেন না বৃদ্ধ শ্রীকৃষ্ণবাবু। ভেজা চোখে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বারবার অভিযোগ করছেন, 'পুলিশ আমার ছেলেটাকে মেরে দিল।' কিছুক্ষণ পর ধাতস্ত হয়ে তিনি বলেন, 'প্রথমে ভেবেছিলাম যে পাচারকারীকে ধরতে বিএসএফ অভিযান চালাচ্ছে। আমি চেঁচামেচি শুনতে পাই। আমি বের হতে যাই, তবে আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে আটকে দেন। এর কিছুক্ষণ পরে আমি দু'বার গুলি চলার আওয়াজ শুনলাম। আমাকে তারপর বলা হল যে পুলিশ মৃত্যুঞ্জয়কে গুলি মেরে চলে গিয়েছে। ৩০ ফুট দূরে রক্তে ভেসে যাওয়া আমার ছেলের কাছে যেতেও পারলাম না। সারা রাত আমার কান্না থামল না।'

এদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী গৌরি বর্মণও ভেঙে পড়েছেন স্বামীকে হারিয়ে। পাঁচ বছরের শিশু, অসুস্থ শ্বশুরকে নিয়ে কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। পরিবারে দায়িত্ব একা মৃত্যুঞ্জয়ের ওপরই ছিল। এই আবহে গৌরি বলেন, 'আমি পুলিশের সেই পাশবিক চেহারা ভুলতে পারছি না। আমার স্বামীকে গুলি করে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল তারা। আমার স্বামীকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেনি পুলিশ।' সেই সেদিন থেকে পুলিশ আর গ্রামে ঢোকার সাহস দেখাতে পারেনি। এমনকী ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ ফেরাতে এসেও গ্রামে ঢোকেনি পুলিশ। এদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ দাহ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দেহ তাঁরা সমাধিস্থ করে রেখেছেন। আদালত যদি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং তাতে ফের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়, সেই আশা থেকেই এই সিদ্ধান্ত।

এদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের গ্রামের ৩৫ কিমি দূরেই অবস্থিত রয়েছে আরও একটি গ্রাম। সেই গ্রামেও শোকের ছায়া। এই গ্রাম হারিয়েছে ১৭ বছর বয়সি একটি ফুটফুটে প্রাণকে। মৃত নাবালিকার বাবা বিলাশু বর্মণ কর্মসূত্রে নেপালে থাকেন। তবে তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন। এদিকে মৃত নাবালিকার মা ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁরাও নাবালিকার দেহকে দাহ করেননি। ভবিষ্যতে যদি ফের ময়নাতদন্তের প্রয়োজন পড়ে, সেই আশায় মেয়ের দেহ সমাহিত করে রেখেছেন বিলাশুবাবু। এই বিষয়ে মৃতার পরিবারের এক সদস্য সন্ধ্যা বর্মণ বলেন, 'আমরা রাজবংশীরা মৃতদেহ দাহ করে থারি। তবে আমরা এই ক্ষেত্রে দেহ সমাহিত রেখেছি। যদি পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য ফের দেহ মাটি থেকে তুলতে হয়, এর জন্যই আমরা এটা করেছি। আমরা নিশ্চিত যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে এই মামলায়। স্থানীয় পুলিশের ওপর কোনও আস্থা নেই আমাদের। তাঁরা তৃণমূল ক্যাডারের মতো কাজ করছে।'


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]