আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশে ডিলার এবং কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া, টিএসপিসহ বিভিন্ন ধরনের সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। আর হঠাৎ এ খবরে দুশ্চিন্তার ছাপ কৃষকের কপালে। সারের দাম বাড়ায় কৃষককে এখন বিঘাপ্রতি বাড়তি খরচ গুনতে হবে ৬৫৫ টাকা।
সোমবার (১০ এপ্রিল) থেকেই সারের নতুন দাম কার্যকর করার কথা জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও পুনর্নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করার জন্য মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, বৈশ্বিক সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্যারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশে সার আমদানি অব্যাহত রাখা এবং সারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২২ টাকা থেকে ২৭ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে ডিএপি সারের মূল্য ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১ টাকা করা হয়েছে। টিএসপি সারের মূল্য ডিলার পর্যায়ে ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে। এমওপি সারের মূল্য ডিলার পর্যায়ে ১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে।
বর্তমানে কৃষকের এক বিঘা জমিতে ধান আবাদে সারের জন্য মোট খরচ ২ হাজার ৯৯০ টাকা। এর মধ্যে ৪০ কেজি ইউরিয়া সারে কৃষকের খরচ ৮৮০ টাকা, ৩০ কেজি ডিএপি ৪৮০ টাকা, ২৫ কেজি এমওপি ৩২৫ টাকা, ২০ কেজি জীপসাম ৬৭৫ টাকা, ৩ কেজি ম্যাগনেসিয়াম ৩০০ টাকা, ১ কেজি জিংক ১৮০ টাকা এবং ১ কেজি বোরণ কিনতে ব্যয় হয় ১৫০ টাকা।
তবে দাম বাড়ানোর পর খরচ হবে ৩ হাজার ৬৪৫ টাকা। এর মধ্যে ৪০ কেজি ইউরিয়া সার কিনতে কৃষকের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা, ৩০ কেজি ডিএপিতে ব্যয় ৬৩০ টাকা, ২৫ কেজি এমওপি ৪৭৫ টাকা, ২০ কেজি জীপসাম ৭৫০ টাকা, ৩ কেজি ম্যাগনেসিয়াম ৩৫০ টাকা, ১ কেজি জিংক ২১০ টাকা এবং ১ কেজি বোরণে ব্যয় হবে ১৫০ টাকা।
হঠাৎ সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের কপালে ভাঁজ দেখা দিয়েছে। সারসহ কৃষি উপকরণের দাম এভাবে দফায় দফায় বাড়ালেও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
কাঠফাটা খরার পর রংপুরে বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। রোপণের পরই ধানক্ষেতে সার ছিটিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে কৃষকের ঘাড়ে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানোর বোঝা চাপালো সরকার। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সারের দাম না বাড়ানোর আশ্বাসের পরও হঠাৎ দাম বাড়ায় অনেকটা মাথায় হাত কৃষকের।
এক কৃষক বলেন, ‘সার, কীটনাশক, তেলসহ কৃষি উপকরণের দাম এভাবে বাড়লে কৃষকের কী হবে? এমনিই তো সারের দাম বাড়তি। তার ওপর ধানের দাম কম। এখন যদি এমনভাবে সারের দাম বাড়তে থাকে, তাহলে কৃষকের তো কোনো উপায় থাকবে না। বস্তায় ৩০০ টাকা বাড়ার মানে কী, এর মানে হচ্ছে কৃষককে খুন করা।’
নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় মাঠের বোরো ধান কেটে তোলার অপেক্ষায় চাষিরা। এ অবস্থায় এখন আবাদে সারের তেমন চাহিদা নেই। তবে চাষিরা বলছেন, সারের বাড়তি দামের ঘোষণা সামনের মৌসুমের জন্য তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। জেলার প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে ফসল চাষাবাদে বছরে ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন সার দরকার হয়। বাড়তি দরের কারণে জেলার কৃষকদের অতিরিক্ত প্রায় ১১০ কোটি টাকা গুনতে হবে।
কৃষকরা জানান, সারের দাম বাড়ার কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হবে। এভাবে দফায় দফায় সারের দাম বাড়লে তাদের কী হবে?
বোরো মৌসুমে এখন সিরাজগঞ্জে সারের চাহিদা আর নেই। কিন্তু আগামী মৌসুমে সারের জন্য কৃষকদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে। তাতে বেড়ে যাবে ফসলের উৎপাদন খরচও। এতে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সারের বাড়তি দাম প্রত্যাহারের দাবি তাদের।
সারের দাম বাড়ায় দুর্ভোগে পড়া এক প্রান্তিক চাষি বলেন, ‘সারের দাম বাড়ানো মানে কৃষকের লোকসান। সারের দাম যেহেতু বাড়ানো হয়েছে, সেহেতু ধানের দামও বাড়ানো হোক। আর যদি সারের দাম কমানো হয়, তাহলে আমাদের ধানের দাম যা আছে তাতে আমাদের চলবে।’