রোজায় অসুস্থতার বিধান


ধর্ম ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 07-04-2023

রোজায় অসুস্থতার বিধান

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব মুসলমান নারী-পুরুষদের ওপর রমজানের রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন। আবার অসুস্থদের জন্য রোজার বিধান শিথিল করেছেন। অসুস্থদের রোজার বিধান কী?

ইসলাম এক ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। যার মাঝে কোনো কঠোরতা এবং বাড়াবাড়ি নেই। ইসলাম মানুষের ফিতরাত এবং চরিত্রের দিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। আল্লাহ তাআলা তার বান্দার ওপর এমন কোনো বিধি-নিষেধ দেননি যা পালন করা তার জন্য সাধ্যাতিত বা প্রচন্ড কষ্টকর।

এছাড়া নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ সুন্নত দ্বারা ইসলামের প্রত্যেক বিধি-নিষেধ আমল করে দেখিয়েছেন। রোজা সম্বন্ধেও আল্লাহ তাআলার নির্দেশমালা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে নিজের ওপর আমল করেছেন তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পেয়ে মুসলিম উম্মাহকে আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস থেকে জানা যায়-

‘রোজার দিনগুলোতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ বা সফরে থাকলে রোজা রাখতেন না। সফর বা অসুস্থতার কারণে ছেড়ে দেওয়া রোজগুলো বছরের অন্যান্য দিন পূর্ণ করতেন।’

কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, কিছু মানুষ এমন আছেন যারা কোরআন-হাদিসের বিধিবিধান ছেড়ে দিয়ে নিজের ওপর এমন কষ্টকর বোঝা চাপিয়ে নেয়; যা ইসলাম বিরোধী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিশেষ কিছু অবস্থায় রোজা রাখতে বারণ করেছেন, যেমন- সফরে অথবা অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখা নিষেধ।

এছাড়া শিশুদের, গর্ভবতীদের এবং স্তন্যদানকারী নারীদেরও রোজা না রাখার নির্দেশ রয়েছে। স্তন্যদানকারী নারীরা দুই বছর পর্যন্ত তাদের সন্তানকে দুধ পান করানোর নির্দেশ পবিত্র কোরআন থেকেই পাওয়া যায়।

পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও অনেকে গায়ের জোরে অসুস্থ অবস্থায় এবং সফরে রোজা রাখেন, এটা মোটেও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা যা আদেশ দিয়েছেন তা পালন করার মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ

‘তোমাদের মাঝে যে এ মাসকে পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে। কিন্তু যে অসুস্থ অথবা সফরে থাকে তাকে অন্যান্য দিনে রোজার এ সংখ্যা পূর্ণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ৮৫)

এ আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সহজ চান আর তোমাদের কষ্টে ফেলতে চান না।’ কিন্তু আফসোস তাদের জন্য যারা এই রোজাকে কষ্টদায়ক বানিয়ে নেয়। তারা রোজার বিষয়ে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করে। সমস্ত রোজাকেই তারা ইসলাম মনে করে আর তাই যতই অসুস্থ হোক বা দুর্বল, বৃদ্ধ হোক বা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী তাদের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে চায় না।

অসুস্থতা যদি বেড়েও যায় অথবা স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তারপরেও রোজা ছাড়ে না। রোজার ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোরতা কোনোভাবেই ইসলাম সম্মত নয়। আল্লাহপাক মানুষের স্বাচ্ছ্যন্দ চান, মানুষের কষ্ট হোক এটা তিনি চান না।

অপর দিকে কিছু মানুষ এমনও আছে যারা বাহ্যিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যাদের কাছে রমজানের দিনগুলোর যেন কোনো গুরুত্বই নেই। রমজান মাস আসে আর তার ফজল ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে চলে যায় কিন্তু তাদের এ দিকে খেয়ালও থাকে না যে, রমজান এলো এবং চলে গেল।

রমজান মাসে সফর করা অবস্থায় রোজা রাখায় প্রকৃত পক্ষে এতে কোনো কল্যাণ নেই। এমন অবস্থায় রোজা না রাখাটাই কল্যাণ। নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য আমল যেমন শুধু আল্লাহ তাআলার নির্দেশে করা হয়, ঠিক রোজা সম্পর্কে আল্লাহ যে আদেশ-নিষেধ রয়েছে তাও মানতে হবে।

অসুস্থদের ক্ষেত্রে রোজা পালনে কঠোর নিষেধ রয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি এমন অসুস্থ হয় আর তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে সে ফিদইয়া আদায় করবে আর পরবর্তী রমজানের আগে এ রোজা রাখবে এবং গননা পূর্ণ করবে। যদি সে ফিদইয়াও দেয় আর রোজা রাখে তাহলে তার জন্য অধিক পুণ্য রয়েছে।

যারা চির রোগী, দুর্বল এবং যাদের রমজানের পরেও রোজা রাখার শক্তি নাই, সন্তানদের দুধ দানকারী নারী এবং গর্ভবতী নারী, যাদের পক্ষে রোজা রাখা একেবারেই অসম্ভব ফিদইয়া দেবে।

যদি কোনো মুসলমান বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হন এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে বা সক্ষমতা ফিরে পেয়ে রোজা আদায় করার কোনো সম্ভাবনা না থাকে, সে ক্ষেত্রে তার প্রত্যেকটি রোজার জন্য ফিদিয়া হিসেবে একজন মিসকিনকে খাবার দিতে হবে। একজনের একদিনের খাবার হিসেব করে কোনো মিসকিনকে সে পরিমাণ অর্থ দিলেও ফিদইয়া আদায় হয়ে যাবে।

মনে রাখতে হবে

রমজানের রোজা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম। এই রোজা রাখার বিষয়ে যদি কোনো দুর্বলতা দেখা যায় তাহলে এটা হবে দুর্ভাগ্যের কারণ। এছাড়া কোরো উপযুক্ত কারণ ছাড়া সামান্য বিষয়ে অজুহাত দাঁড় করিয়ে রমজানের রোজা ত্যাগ করা মোটেও উচিত নয়।

অনেককেই দেখা যায়, সামান্য কারণেই রোজা ছেড়ে দেয় বা রাখে না। এছাড়া যারা জেনে বুঝে রোজা ত্যাগ করে তাদের সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়াই রমজানের একটি রোজাও ত্যাগ করে বা ছেড়ে দেয় সে ব্যক্তি যদি পরবর্তিতে জীবন ভরও ঐ রোজার বদলে রোজা রাখে তবুও সেটা তার পরিপুরক হবে না।’ (মুসনাদ দারেমি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার দিনগুলোতে সুস্থতার সঙ্গে রোজা পালন করার সামার্থ্য দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]