বিশ্বাসী বান্দা সাওয়াবের আশায় শুধু রমজানের রোজা পালন করলেই তাদের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রমজানের রোজা পালন নফল ইবাদত নয়, বরং এটি ফরজ ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার ইবাদত। রমজান মাসেই মুমিন বান্দা সহজে ক্ষমা লাভ করতে পারে।
সহজে ক্ষমা লাভের বিষয়টি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকেই প্রমাণিত। আবার প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ক্ষমা লাভের ঘোষণা ছাড়াও রয়েছে রমজানের তিনটি ইবাদতের নিগুঢ় পর্যালোচনা। সেগুলোও হাদিসে বর্ণিত। যা রোজাদারকে গোনাহমুক্ত মুমিন বান্দায় পরিণত করে দেয়। হাদিসের বর্ণনানুযায়ী ইবাদত, সহজে ক্ষমা লাভের পর্যালোচনা-
রমজানে সন্ধ্যা রাতের ইবাদত: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়তে উৎসাহিত করতেন, তবে তিনি (সরাসরি) তাগিদ সহকারে আদেশ করতেন না; বরং তিনি এভাবে বলতেন- ‘যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানের সঙ্গে এবং সাওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে (রাতের) নামাজ (তারাবিহ) পড়ে, তার বিগত (জীবনের) সব (সগিরা) গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম, মিশকাত)
শেষ রাতের প্রার্থনা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন আমাদের রব্ব প্রত্যেক রাতে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন- আমার কাছে যে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া কবুল করবো। আমার কাছে যে চাইবে, আমি তাকে দেব। আমার কাছে যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাকে আমি ক্ষমা করে দেব।' (বুখারি)
রাতের শেষ সময়ে সেহরি খাওয়া: হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরিতে রয়েছে বরকত।' (বুখারি ও মুসলিম)
(রাতের শেষ সময়) সাহরি খাওয়া বরকতময় কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি কর। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ইবনে হিব্বান)
রোজাদারের মর্যাদায় আল্লাহর ঘোষণা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন যে, রোজা আমার জন্যই, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। যেহেতু সে আমারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার প্রবৃত্তি, তার আহার ও তার পান ত্যাগ করেছে। আর রোজা হলো ঢালস্বরূপ। রোজা পালনকারীর জন্য আছে দু’টি আনন্দ। এক আনন্দ হলো যখন সে ইফতার করে, আর এক আনন্দ হলো, যখন সে তার রব্বের সঙ্গে মিলিত হবে। আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ মেস্কের সুগন্ধি থেকেও উত্তম।' (বুখারি)
সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেতে যে তিনটি কাজ ধারাবাহিকভাবে পালন করা জরুরি। তাহলো-
প্রথমত: যারা রমজান মাসের রোজা রাখেন, তারা সন্ধ্যা রাতে ক্ষমা লাভের পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তারাবিহ পড়লেই আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।
দ্বিতীয়ত: যারা রমজান মাসের রোজা রাখেন, তারা শেষ রাতে সাহরি খেতে ওঠেন। এ সময়ে তাহাজ্জুদ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আর এ সময়টিতেই মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকেন। তাহলে আল্লাহর আহ্বান ও বান্দার ক্ষমা প্রার্থনা এক সঙ্গে হলেই তো সুনিশ্চিত ক্ষমা লাভ করবে রোজাদার।
তৃতীয়ত: রাতের শেষ সময়ে সাহরি গ্রহণে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ। ফেরেশতারা সাহরি গ্রহণকারীর জন্য রহতের দোয়া করেন। সাহরি গ্রহণকারী ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তবে আল্লাহর রহমতে সে ব্যক্তি ক্ষমা লাভকারী বান্দায় পরিণত হবেন।
সর্বোপরি, রমজান মাসের রোজা শুধু আল্লাহর জন্যই রাখা হয় বলে হাদিসে কুদসিতে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। তিনি রোজাদারের প্রতিদান দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আবার এ কথাও ঘোষণা করেছেন, রোজাদারের মুখের গন্ধ তার কাছে মেশকের চেয়ে সুগন্ধি ও প্রিয়। তবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা কীভাবে গুনাহগার হতে পারে?
হাদিসের সুসংবাদগুলো থেকেই এ কথা প্রমাণিত যে, রোজাদার যদি রমজানের হক আদায় করে যথাযথভাবে প্রতিদিনের নিয়মিত কাজগুলো আদায় করে, তাতেই সে পাবে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহজে ক্ষমা পাওয়ার, রমজানের রোজা পালন করার, ইফতার করার, তারাবিহ পড়ার, তাহাজ্জুদ পড়ার, সেহরি খাওয়ার ও ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।