মনবাসনা পূরণে আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। মানুষের জীবনের সব কর্মকাণ্ড শুধু আল্লাহর জন্য। তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন- (হে রাসুল! আপনি) বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছু মহান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। আর তিনিই মানুষের জীবনের সব মনবাসনা পূরণ করতে পারেন। তাই মনবাসনা পূরণে তাঁর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে। যেভাবে তিনি বলেছেন। মনোবাসনা পূরণের এ আমলগুলো কী?
মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং জীবন বিধান মেনে চলবে। শুধু ব্যক্তিজীবনই নয় বরং পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সবক্ষেত্রেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা করতে হবে। তবেই পূরণ হবে মনবাসনা। পাওয়া যাবে আল্লাহর সাহায্য ও সন্তুষ্টি। কোরআন-সুন্নাহ থেকেই তা প্রমাণিত।
মানুষের এ মনোবাসনা পূরণের সবচেয়ে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা হলো শয়তানের কুমন্ত্রণা ও মন্দ কাজ। শয়তানের সব কুমন্ত্রণা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর পরীক্ষায় যথাযথভাবে পাশ করতে হলে কোরআন-সুন্নায় নির্দেশিত দোয়া ও আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তাহলো-
১. হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে-
رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা’ রাব্বানা ওয়া লা তাহাম্মিলনা মা লা ত্বাক্বাতা লানা বিহি। ওয়াআ ফু আন্না ওয়া গফিরলানা ওয়ারহামনা আন্তা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৬)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ওপর ভারী ও কঠিন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেবেন না; যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদের এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের মাফ করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।’
তা (এই কোরআনি দোয়া) তার (প্রয়োজন পূরণের) জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি ও মুসলিম)
২. আসহাবে কাহাফের গুহাবাসী ৭ যুবক যখন বাদশার অত্যাচার-নির্যাতনে ঘর-বাড়ি, সমাজ ও জনপদ ছেড়ে এক গুহায় আশ্রয় নিয়ছিলেন; তখন যেন তারা আল্লাহর হুকুম সঠিকভাবে পালন করতে পারেন সে কারণে আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করেছিলেন-
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً وَّ هَیِّیٴۡ لَنَا مِنۡ اَمۡرِنَا رَشَدًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাও ওয়া হাইয়্যিই লানা মিন আমরিনা রাশাদা।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১০)
অর্থ : ‘হে আমদের রব! আপনার কাছ থেকে আমাদের রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন।’ (তাফসিরে ইবনে কাছির)
৩. বিপদ-মুসিবতে মনের উদ্দেশ্য পূরণে এই আমলটি করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেই সব লোক তারা, যখন তাদের বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে-
اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ
উচ্চারণ : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
অর্থ : ‘আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমাদের সবাইকে তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৬)
সুতরাং মানুষের উচিত, নিজেদের মনের একান্ত বাসনাগুলো পূরণে কোরআনুল কারিমের এ দোয়াগুলোর আমল করা।
মনোবাসনা পূরণে নবিজীর নির্দেশিত দোয়ার আমল
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক হাদিসে মানুষের সব ধরনের নেক মাকসাদ পূরণে আল্লাহর কাছে দোয়া করার কথা বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
১. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি চিন্তা-ভাবনা, পেরেশানি কিংবা কোনো জটিল বিষয়ের সম্মুখীন হবে তার পক্ষে উপল্লেখিত বাক্যগুলো বেশি বেশি পড়া উচিত। তাতে সব জটিলতা সহজ হয়ে যাবে। তাহলো-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ، وَرَبُّ الْأَرْضِ، وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’
অর্থ : ‘আল্লাহ্ ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি অতি মহান, অতি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতিত কোনো সত্য ইলাহ বা উপাস্য নেই, তিনি বিশাল আরশের মালিক। আল্লাহ ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি আসমান-জমিনের এবং মহান আরশের মালিক।’ (বুখারি, মুসলিম, মেশখাত)
২. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِن ضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আঝযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ ((বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মনোবাসনা পূরণে শুধ মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। যে কোনো প্রয়োজন ও হাজত পূরণে কোরআন-সুন্নাহ দিকনির্দেশিত দোয়া ও আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। আর তাতেই পূরণ হবে মুমিনের সব মনোবাসনা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব মনোবাসনা পূরণ করুন। মনোবাসনা পূরণে কোরআন-সুন্নাহ দিকনির্দেশিত আমল যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময় /এএইচ