আঞ্চলিক মহাসড়কে টোল আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেন। একনেকের এ সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অবকাঠামো নির্মাণ করছে। তাই আঞ্চলিক মহাসড়কে ন্যূনতম হারে হলেও টোল আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মানুষের মধ্যে টোল দেওয়ার সংস্কৃতিও গড়ে উঠবে।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
মান্নান বলেন, ছোট জায়গায় অনেক বেশি দোকান। তারা গাদাগাদি করে ব্যবসা করছেন। নিশ্চয়ই তারা ইচ্ছা করে সেটি করছেন না, আমরা সেটি বুঝি। কিভাবে এর সমাধান হতে পারে-এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ফসলি জমি যতটা সম্ভব এড়ানো যায় তার পরামর্শ দিয়েছেন। একনেক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন : যুগান্তর প্রতিবেদক জানান, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনসহ ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৬০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে সিএমএইচ এ ক্যানসার সেন্টার নির্মাণ, ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিএজি’র ৪৭টি অডিট রিপোর্ট হস্তান্তর : বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অডিট রিপোর্ট হস্তান্তর করেছেন। মঙ্গলবার সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে দেখা করেন। এ সময় তিনি সংসদে উপস্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়নের জন্য মোট ৪৭টি অডিট রিপোর্ট পেশ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস বৈশ্বিক, সমাধানও বৈশ্বিক হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস বৈশ্বিক, তাই এর সমাধান ও ব্যবস্থাপনাও বৈশ্বিক হতে হবে। সবার জন্য একটি উন্নত বিশ্ব গড়তে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে হবে। বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করে কার্যকর নীতি ও পরিকল্পনার পাশাপাশি একক দেশের প্রচেষ্টার সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন। মঙ্গলবার দুর্যোগসহিষ্ণু অবকাঠামোসংক্রান্ত পঞ্চম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিও বার্তায় (পূর্বে ধারণ করা) প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যে কোনো উদ্যোগে যোগ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন এবং সহিষ্ণু অবকাঠামোর জন্য সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময়ের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অপ্রত্যাশিত সংকট মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার এবং সম্মতি অপরিহার্য। তিনি বলেন, আমাদের সবার জন্য একটি টেকসই এবং প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংস্থা, বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি প্রয়োজন। একইসঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, স্থিতিস্থাপক রূপান্তরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আমাদের চিন্তাভাবনায় এ বিষয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। এ সময়োপযোগী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান। ২০২১ সালের জুলাইয়ে এ প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশ যোগ দেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনাকাঙ্ক্ষিত জলবায়ু বিপর্যয় ও দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আমাদের প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং এই আঘাত ও চাপ সহিষ্ণু শক্তিশালী এবং ভৌত অবকাঠামো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্র্রতি তুরস্ক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে ভূমিকম্প, ক্যারিবিয়ান, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় হারিকেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যার মতো সিরিজ বিপর্যয় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বলেন, গত বছর আমাদের দেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছি। এর ফলে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।