বাংলাদেশের ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ বা ভাবমূর্তি বেড়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১২১টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম। এক বছরের ব্যবধানে জাতীয় ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানা খাতে বাংলাদেশের সাফল্য রাষ্ট্র হিসেবে ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়তে সহায়তা করেছে, যা পাকিস্তানের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়ে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফিন্যান্স’ প্রকাশিত ‘নেশন ব্র্যান্ডস ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি দেশের ইমেজ বা ভাবমূর্তি নির্ণয় করে। বিষয়গুলো হলো—পণ্য ও পরিষেবার মান, বিনিয়োগ এবং সমাজ। এগুলো আবার পর্যটন, বাজার, সুশাসন এবং জনগণ ও দক্ষতা—এই চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ নির্ভর করে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর। বিশ্ববাজারে এটি একটি বড় সম্পদ। ইমেজ ভালো থাকলে বিনিয়োগ বাড়ে, রপ্তানিতে গতি সঞ্চার হয় এবং পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাংলাদেশের ইমেজ সবচেয়ে বেড়েছে। ২০২২ সালের ৩৬তম থেকে চলতি বছর বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৩১তম অবস্থান। সেই হিসাবে বাংলাদেশের পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের এই ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ৫০ হাজার ৮০০ কোটি (৫০৮ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ৫৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার (৩৭১ বিলিয়ন ডলার) ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্র্যান্ড মূল্য বেড়েছে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
তালিকায় শীর্ষ দশে থাকা দেশগুলো হচ্ছে—যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, ভারত, কানাডা, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ভারতের অবস্থান নবম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ন্যাশন ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ফিন্যান্স বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সূচকগুলোকে প্রাধান্য দেয়, সামাজিক সূচকগুলো তাদের মূল্যায়নে তেমন আসে না। বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটেছে এই প্রতিবেদনে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভালো করেছি। তবে মনে রাখতে হবে, উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়া সবচেয়ে কঠিন। আমাদের কঠিন পথটি পাড়ি দিতে সম্মিলিত উদ্যোগ লাগবে। নিজেরা যদি বিশ্বাস না করি আমরা ভালো করছি, তাহলে অন্যরাও আমাদের বিশ্বাস করবে না। যেখানে চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’
এই রেটিংকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এবং সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর নেওয়া নানা কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশের ইমেজ বেড়েছে।’
ব্র্যান্ড ফিন্যান্স তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, একটি দেশ কিভাবে অবস্থান এবং নিজেকে প্রকাশ করে সেটাই তাদের জাতীয় ব্র্যান্ডিং। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি জাতীয় ব্র্যান্ডকে স্পটলাইটে রাখতে পারে। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দ্রুততম বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা বছরে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ এবং বিশ্বব্যাংকের ‘দারিদ্র্য বিমোচনের’ জন্য ঘোষিত মডেল। দ্রুততম বর্ধনশীল দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে। জাতীয় ব্র্যান্ডটি ২০২৩ সালের র্যাংকিংয়ে তাই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে।