শেখ হাসিনা সক্রিয় হচ্ছেন নির্বাচনী কূটনীতিতে


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 01-04-2023

শেখ হাসিনা সক্রিয় হচ্ছেন নির্বাচনী কূটনীতিতে

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কূটনৈতিক যোগাযোগ বেড়েছে। গুলশান-বারিধারায় কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ, দেন-দরবার এবং লবিংও জমজমাট। চলতি বছরের গত তিন মাসেই যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করে গেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে বেড়েছে পশ্চিমা ও তাদের মিত্র দেশগুলোর তৎপরতা। এ অবস্থায় সক্রিয় হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। রোজার ঈদের পর তিনি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করবেন বলে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বলিষ্ঠ নেতৃত্ব হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা। বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে তিনি রোল মডেল। ১০ লাখের বেশি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে মানবতাবাদী নেতা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কারণেও তিনি সমাদৃত। তার চৌকস পরিচালনায় ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান্তরাল সহযোগিতার সম্পর্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করার বিষয়েও তিনি সচেতন।

নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চালকের আসনে রয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই দূরদর্শী নির্দেশনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে নির্বাচন ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সরকারের দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করছে। গত ৬-৯ মার্চ বছরের প্রথম বিদেশ সফরে কাতারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নেন সরকারপ্রধান। ঈদের পর জাপান এবং সেপ্টেম্বরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা রয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো কোনো সফর চূড়ান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, জাপানের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও করোনার কারণে গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা-টোকিও সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরটি স্থগিত হয়। এখন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে জাপান সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী। এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। নির্বাচনের আগে সরকারপ্রধানের সফরগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় হিমশিম অবস্থায় গত দুবছরে সরকারকে আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে হয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কয়েকজন রাষ্ট্রদূত বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে তারা পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে না। এটি হলে অন্য পশ্চিমাদেশগুলোও আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিরত থাকতে পারে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ফলে সরকারও চাইছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। এদিকে আন্তর্জাতিক চাপ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে যেসব দেশ সরকারের ওপর নাখোশ রয়েছে, সেসব দেশ সফরের সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগসহ সরকার সমর্থিত দলগুলোর নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কূটনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে জানিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ চায় না সরকার। তবে বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পরামর্শ স্বাগত জানাবে। বিদেশি কূটনীতিকরাও এখন আর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা বলছেন না। বরং তারা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, সহিংসতামুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদিও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় রয়েছে। সম্প্রতি ইইউ ও ভারতের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না তারা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বলেছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিদেশি কূটনীতিকরা চাইছেন, বিভিন্ন দলগুলো রাজনৈতিক সংলাপে নিজেরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিক।

ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব, ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়াসহ ক্ষমতাধর দেশগুলো বাংলাদেশকে পাশে রাখতে চায়। দেশের রাজনীতিকদের নির্বাচনী কূটনীতির দৌড়ঝাঁপ এবং বিভিন্ন দেশের নানা চাপ ও পাল্টাপাল্টি বাহাস বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। এবার স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার সুস্পষ্ট মনোভাব তুলে ধরেছেন, যা নজিরবিহীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইতিবাচক মনোভাবকে ধরে রাখাই হবে দূরদর্শী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক কৌশল।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্বের বিশ্বনেতা। জলবায়ুর পরিবর্তন, নিরাপদ অভিবাসন, আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবিলা, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ মহাসচিব গঠিত গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের ৬ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের একজন হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই স্বভাবতই তার নেতৃত্বের সরকার এদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ চায় না। বন্ধু ও বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ চায়, বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে জোরালো ভূমিকা রাখবে, জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করবে, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন ইস্যুতে কোনো দেশের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব আছে বলে মনি করি না। সংবিধান অনুসারে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

এদিকে, ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সুসম্পর্ক দিনে দিনে গভীরতর হচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনে দেশটির বাংলাদেশে আমন্ত্রণ বার্তা দেয়, গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আজ মর্যাদার সহযোগিতার সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান স্বাধীনতার বার্তায় যুক্ত করেছেন। দুই শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ও চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশকে পাশে রাখতে মরিয়া। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় ভারত ও রাশিয়ার অগ্রাধিকারও বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্র নীতিকে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরকার কূটনীতিতে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় প্রধানমন্ত্রী তার আসন্ন সফরগুলোতে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দেবেন। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সবাই বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। নির্বাচনের পর যারাই সরকার গঠন করুক, দেশগুলো চাইবে যেন স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকুক। আর অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বর্তমান সরকারের বিদেশি হস্তক্ষেপ স্বাগত না জানানোর নীতিটিও সবাই ওয়াকিবহাল হয়েছে। তাই দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার সম্পর্কই এসব সফরে গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করছি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]