বরকতময় রমজানের রহমতের দশকের রোজা পালন করছে রোজাদার। রমজান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করার মাধ্যম। রহমতের দিনগুলোতে তার সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করা হোক না কেন আল্লাহ তাতে অনেক অশেষ কল্যাণ দান করেন। রমজানের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে ইফতার। কেননা, এতে বরকত রয়েছে।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সেহরি খাওয়াতে কিছুটা বিলম্ব করতে এবং ইফতার সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে করাকে পছন্দ করতেন এবং তিনি তার উম্মতকে এই নির্দেশই দিয়েছেন, তারাও যেন এমনটি করেন।
এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন কল্যাণের মাঝে অবস্থান করবে’ (বুখারি)
আরেক স্থানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত ওমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রাত ঐ (পূর্ব) দিক হতে আসে এবং ঐ (পশ্চিম) দিকে চলে যায় আর সূর্য ডুবে যায় তখন যেন রোজাদার ইফতার করে নেই।’ (বুখারি)
অনেকেই এমন আছে যে, ইফতারের সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করে কিন্তু দোয়া পড়ে না। অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইফতারের পূর্বে দোয়া করতেন। মুমিন মুসলমানের উচিত, ইফতার শুরুর আগে দোয়া করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইফতারের সময় দোয়ায় রত থাকতেন। তিনি ইফতারের পূর্বে এই দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ اِنِّى لَكَ صُمْتُ وَبِكَ امنْتُ وَلَكَ رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সূমতু ওয়াবিকা আমানতু ওয়া লাকা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই ওপর ঈমান এনেছি এবং তোমারই রহমতের রিজিক দ্বারা ইফতার করছি’ (মুসলিম)।
এছাড়া ইফতার শেষেও তিনি মহান আল্লাহ পাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে দোয়া করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)
মুমিন মুসলমানকে মনে রাখতে হবে প্লেট ভর্তি বাহারি ইফতার আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট এর নাম ইফতার নয়, এটি বাহ্যিকতা। আল্লাহর কাছে বাহ্যিকতার কোন মূল্য নেই। প্রকৃত রোজাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজে ইফতার করে এবং অন্যকে ইফতার করায়।
তাই ইফতার শুধু নিজে করলেই হবে না বরং অন্যান্যদেরকেও ইফতার করাতে হবে। যে যেই অঞ্চলে বা গ্রামে বসবাস করে, এর আশপাশে এমন অনেক রোজাদার পাওয়া যাবে যাদের কাছে ইফতার করার মত হয়তো কিছুই থাকেনা। এমন লোকদের খুঁজে বের করে তাদের ইফতারের ব্যবস্থা করাও মুমিন মুসলমান রোজাদারের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা সবাইকে ইফতার করার ও অন্যকে ইফতার করানোসহ নবিজির সুন্নত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।