দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একের পর এক দুর্যোগ কীসের পূর্বাভাস?


রাজশাহীর সময় ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 23-01-2022

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একের পর এক দুর্যোগ কীসের পূর্বাভাস?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিপাইনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিয়ারগাও এলাকায় গত ১৬ ডিসেম্বর প্রবল শক্তিতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রাই। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা কখনো কখনো ২৪০ কিলোমিটারেও উঠছিল। দক্ষিণ চীন সাগরে সরে যাওয়ার আগে ফিলিপিনো ভূখণ্ডে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় এই ঝড়। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল রাই।

দমকা বাতাস আর প্রবল ঝড়ের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি ফিলিপাইনে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে। ডুবে যায় উপকূলের কাছাকাছি থাকা নিম্নাঞ্চলগুলো। ভেসে যায় বহু মানুষ, গবাদিপশু, গাছপালা। ঝড়, বৃষ্টি, বন্যায় একপ্রকার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশটির দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত পাঁচ লাখ বাড়িঘর, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় বহু মাছধরা নৌকা। ধ্বংস হয়ে যায় সেতুগুলো, কাদায় ঢাকা পড়ে সব রাস্তাঘাট। পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ঘূর্ণিঝড় রাইয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ৪২ লাখ মানুষ। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় অন্তত ৭ লাখ ২০ হাজার ফিলিপিনো, তাদের সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি এখনো গৃহহীন। ওই ঝড়ে প্রায় ৪০০ জন প্রাণ হারান, আহত হন এক হাজারের বেশি মানুষ। ৮৩ জনের খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি।

সরকারি হিসাবে, ঘূর্ণিঝড় রাইয়ের আঘাতে অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি ডলারের বেশি।

প্রায় একই সময়ে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যার মুখে পড়ে মালয়েশিয়া। ঘূর্ণিঝড় রাই ফিলিপাইনে আঘাত হানার দিন, অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর থেকে টানা বৃষ্টিপাতে কানায় কানায় ভরে ওঠে মালয়েশীয় নদীগুলো। একপর্যায়ে কুল ছাপিয়ে ডুবিয়ে দেয় দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেসে যায় বহু ঘরবাড়ি। পানিবন্দি অবস্থায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েন বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। খাবারের পাশাপাশি অভাব দেখা দেয় ওষুধ, চিকিৎসাসেবার।

এ বন্যায় মালয়েশিয়ার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে বাধ্য হন। দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এমন দুর্যোগ প্রতি শতাব্দীতে একবারই আসে।

কুয়ালালামপুরের মালায়া ইউনিভার্সিটির আবহাওয়াবিদ আজিজান আবু সামাহ আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজএশিয়াকে বলেছেন, ফিলিপাইনের ঝড় ও মালয়েশিয়ার বন্যার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নেই। মালয়েশিয়ায় বন্যা হয়েছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিম্নচাপ, মৌসুমী বৃষ্টিপাত ও টাইফুন রাইয়ের মিশ্র প্রভাবে।

তবে দুটি ঘটনাতে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে- এ ধরনের দুর্যোগ ক্রমেই আরও শক্তিশালী ও নিয়মিত হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখছে উষ্ণ বায়ুমণ্ডল। এতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে, যা থেকে বন্যা আরও নিয়মিত হয়ে উঠছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে যত তাপশক্তি জমা হয়, তার বেশিরভাগই সঞ্চয় করে মহাসাগরগুলো। আর ঘূর্ণিঝড় সাধারণত মহাসাগরে সঞ্চিত তাপ থেকেই শক্তি সংগ্রহ করে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা আরও বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) সম্প্রতি জানিয়েছে, গত ৪০ বছরে তিন, চার ও পাঁচ ক্যাটাগরির ঝড়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও খারাপের দিকে যাবে।

হতাশাজনক হলেও সত্য, এতকিছুর পরেও ফিলিপাইন-মালয়েশিয়া উভয় দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জোর দেওয়ার বদলে এ নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়িই বেশি দেখা গেছে। মালয়েশিয়ার এক বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেছেন, দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বন্যা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন স্পিকার।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেও অনেকটা একই পথে হেঁটেছেন। আগামী মে মাসে তার উত্তরসূরী নির্ধারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ অবস্থায় ঝড়বিধ্বস্ত সিয়ারগাও এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি স্থানীয়দের সতর্ক করেছেন, তারা যেন রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস না করেন। তার দাবি, রাজনীতিবিদরা দুযোর্গ-দুর্ভোগের পটভূমিতে শুধু ছবি তোলার জন্য ওইসব এলাকা পরিদর্শনে যান।

বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে ভুক্তভোগীদের অন্যের জায়গা থেকে ঝড়ে ভেঙে পড়া নারকেল গাছের কাঠ ও পাতা তুলে নতুন ঘর বানানোর পরামর্শও দেন ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট। সম্ভাবনা রয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রাইয়ের আঘাতে পথে বসা দ্বীপবাসী সত্যিই দুতের্তের পরামর্শ মোতাবেক কাঠ-পাতা দিয়ে নতুন ঘর বানিয়ে থাকা শুরু করবেন, যতক্ষণ না আরেকটি ঝড় এসে সেই ঘরও উড়িয়ে নিচ্ছে। এই ছাড়া আর উপায় কী তাদের? সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

রাজশাহীর সময় / এফ কে


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]