এপ্রিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা মিয়ানমারের


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 26-03-2023

এপ্রিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা মিয়ানমারের

আগামী মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। প্রথম ব্যাচে এক থেকে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনের ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হবে। এরপর তাদের নিজেদের আদি আবাসস্থলে পাঠানো হবে।
মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জো মি তুন গতকাল আলজাজিরাকে বলেছেন, বাঙালিদের (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারের স্বাগত জানানো হবে। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের প্রথম ব্যাচটি এপ্রিলের প্রথমার্ধে আসবে। এই ব্যাচটিকে কয়েক সপ্তাহ ট্রানজিট ক্যাম্পে কাটাতে হবে। এরপর তাদের নিজ আবাসস্থলে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ছয় বছর আগে রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া বাঙালিরা সামরিক শাসনের অধীনে মিয়ানমারে নিরাপদে থাকবে। তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি মিয়ানমার সরকার দিচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের মতে, এসব বাঙালি ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকানে বসবাস শুরু করেছিল। দেশটির নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক বা ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত নয়।
সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার পাইলট প্রকল্পকে অধিকার কর্মীরা মিয়ানমার সামরিক সরকারের পিআর ক্যাম্পেইন (প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড) হিসাবে বিবেচনা করছে। এই পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসাবে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৫ থেকে ২২ মার্চ কক্সবাজারে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেয়। ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান উইন আলজাজিরাকে বলেছেন, আমরা এটিকে পিআর ক্যাম্পেইন হিসাবেই দেখছি। মিয়ানমারের হাতে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা রয়েছে। প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাইলে তারা আগেই পরিকল্পনার কথা জানাতে পারত। এক হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার লক্ষ্য মিয়ানমারের ওপর চীন ও অন্যান্য দেশের চাপ কমানো।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল। এরপর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে কয়েক দফায় মোট ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়। গত বছর জানুয়ারিতে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই তালিকা থেকে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে এক হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দিলেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। সেই ৪২৯ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিল।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় তারা সম্পৃক্ত নয়। প্রত্যাবাসন নিয়ে ইউএনএইচসিআরের অবস্থানে পরিবর্তন হয়নি। সংস্থাটির মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূল নয়। সম্পূর্ণ তথ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে প্রতিটি শরণার্থীর তার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে কোনো শরণার্থীকে এ ব্যাপারে জোর করা যাবে না।
রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের দিক থেকে একটি ইতিবাচক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি আগে দেখা যায়নি। তবে এটি কি সাময়িক বা এটার মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, সেটা আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল এসেছে বলে আগামীকাল রোহিঙ্গারা রাখাইনে রওনা হবে বা পরশু দিন ওদের ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে, ব্যাপারটা সেরকম না। ১১ লাখ রোহিঙ্গা তো এক দিনে, এক মাসে বা এক বছরে ফিরে যেতে পারবে না। প্রতিনিধিদল আসার পর আরো অনেক পদক্ষেপ রয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের দেখতে হবে রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরে যাবে সেখানে সহায়ক পরিবেশ আছে কি না, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা থাকবে কি না। সেখানে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট) বা জাতিসঙ্ঘের উপস্থিতি থাকবে কি না। এসবের সমন্বয় যখন হবে, তখন মিয়ানমার আমাদের সাথে বা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করবে। তার পরই রোহিঙ্গাদের যাওয়ার কথা আসবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার আশাবাদী কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। পাঁচ বছরের বেশি সময় তাদের দেখভাল করছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং প্রত্যাবাসন টেকসই হবে- এ বিষয়ে নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]