নিখোঁজের দুইদিন পর পাবনা-কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকিমত কোম্পানির গাড়িচালক সম্রাট হোসেন (২৯) এর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয় প্রাডো জিপ গাড়িটি।
শনিবার সকাল ১১টায় তার মরদেহ উদ্ধার ও প্রাডো জিপ গাড়িটি জব্দ করা হয়। নিহত সম্রাট ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্য অরণকোলা আলহাজ্ব ক্যাম্প এলাকার বক্কারের ছেলে।
এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত সম্রাটের বন্ধু একই উপজেলার বাঁশেরবাদা গ্রামের আব্দুল মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুন (৩০) কে আটক করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন নিহত সম্রাটের বন্ধু মমিন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জিয়াউর রহমান জানান, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রসাটমের নিকিমত কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন সম্রাট হোসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আটটার দিকে সম্রাট তার পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার খোঁজ না পেয়ে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
শনিবার সকালে পাবনার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাডো জিপের ভেতর থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনেরা গিয়ে মরদেহটি সম্রাটের বলে শনাক্ত করেন।
এর আগে বিভিন্ন সূত্রে ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, সম্রাটের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে বন্ধু মমিন ও তার স্ত্রী সীমা মিলে সম্রাটকে হত্যা করেছেন।
নিহত ড্রাইভার সম্রাটের বাবা আবু বক্কার বলেন, আমার ছেলে সম্রাট তার বন্ধু মমিন ও মমিনের স্ত্রী সীমাকে চাকরি দিয়েছিল। ইতোমধ্যে তাদের চাকরি চলে যায়। আবারও তাদের শ্রমিক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেয়। আমার ছেলে নিকিমত কোম্পানীতে কয়েকটি গাড়ী ভাড়াও দিয়েছিলো। প্রতি মাসে বড় অংকের টাকা বিল তুলতো। গেল বৃহস্পতিবার বিল হয়। কৌশলে আমার ছেলেকে স্বামী-স্ত্রী ডেকে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হত্যা করতে পারে।
আটক মমিনের স্ত্রী সীমা পুলিশকে জানিয়েছে, গেল বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট আমার বাসায় আসে। আমাকে বলে তার মাথা ধরেছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী মমিন ঔষধ আনতে গেলে সম্রাট আমার শরীরে হাত দেয়। আমি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপানাঙ্গে আঘাত করলে সে মারা যায়। পরে আমার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়ীতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করার পর আমার স্বামী আমাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহে গাড়ী রেখে সটকে পড়ে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, নিহত সম্রাটের পরিবার ও গাড়ীর মালিকের তথ্যের ভিত্তিতে বাঁশেরবাদা এলাকায় মমিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে মমিনের স্ত্রী সীমাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক মমিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।