কলকাতা থেকে আগত অতিথিবৃন্দ ও রাজশাহীর বিশিষ্টজনদের নিয়ে প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত


আবু হেনা : , আপডেট করা হয়েছে : 21-03-2023

কলকাতা থেকে আগত অতিথিবৃন্দ ও রাজশাহীর   বিশিষ্টজনদের নিয়ে প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠান  অনুষ্ঠিত

“ কলকাতা থেকে আগত অতিথিবৃন্দ ও রাজশাহীর বিশিষ্টজনদের নিয়ে প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠান তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগে উভয় দেশ লাভবান হবে ,উভয় দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে ”

ভারতের কলকাতা থেকে আগত অতিথিবৃন্দ ও রাজশাহীর বিশিষ্টজনদের নিয়ে প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার বিকেলে নগর ভবন এ্যানেক্স হল রুম সভা কক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আগত ভারতীয় অতিথিদের উত্তরীয়, ক্রেস্ট, আমের মোমেন্ট ও অন্যান্য উপহার প্রদান করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। এরআগে অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে প্রীতিসম্মিলনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর, রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাস কমিউনিকেশন এন্ড ভিডিওগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শ্রী দেবজ্যোতি চন্দ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও ম্যাস কমিউনিকেশন বিভাগের প্রফেসর ড. সান্তুন চট্রোপাধ্যায়, বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইডের আহবায়ক সৌম্যব্রত দাস, কলকাতা বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সদস্য বিদ্যুৎ মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন এ সময় রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম শরিফ উদ্দিন।

রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যেভাবে সহযোগিতা করেছে, তা ভুলে যাবার নয়।  ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। উভয় দেশের সম্পর্ক বজায় আছে, আগামীতেও থাকবে।

মেয়র আরো বলেন, ভারতের মুর্শিবাদের ধূলিয়ান হতে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত নৌবন্দর চালুর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এটি চালু হলে উভয় দেশ থেকে মালামালি আমদানি-রপ্তানি করা সহজ হবে। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে, উভয় দেশের কল্যান হবে।

কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর বলেন, দুই দেশের সুশীল সমাজের মধ্যে সম্পর্ক ও পারস্পারিক ভাবের আদান-প্রদান যত বাড়বে, তখন আমরা বুঝতে পারবো দুই দেশের সম্পর্ক উন্নীত হচ্ছে। আপনাদের-আমাদের সবার শুভ চিন্তার প্রয়োজন। উভয় দেশের মধ্যে সুস্থ্য সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন দৃশ্যমান।পদ্মা সেতু হয়েছে, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল তৈরি হচ্ছে, চট্রগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পণ্য পরিবহনের লজিস্টিক হাব তৈরি হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার সমস্ত নদীপথ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে। এভাবে যখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরীক্ষার সময় আসবে, তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো সুন্দর হবে।

রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শ্রী দেবজ্যোতি চন্দ বলেন, বাংলাদেশ-ভারত, বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজকর্ম হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথ যে কার্যক্রম চলছে, সেগুলো বহমান রাখতে উভয় দেশই সচেষ্ট। তার একটি বড় প্রমাণ গত ১৮ তারিখ মেত্রী তেল পাইপলাইনের উদ্বোধন হলো। আরো বিভিন্ন বিষয়ে কাজ চলছে।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর সঙ্গে পশ্চিমঙ্গের যোগাযোগ সুন্দর হলে উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সান্তুন চট্রোপাধ্যায় বলেন, আপনারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, লালন করেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শহীদদের স্মরণ করেন, তাদের প্রতি ঋণ স্বীকার করেন, তাদের মধ্যে ভয়ানক আত্মীয়তা আছে। তাদের প্রতি ঋণটা মনে করিয়ে দেয় যে জাতির প্রতি আমাদেরও কত্বর্ব্য রয়েছে।

বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইডের আহবায়ক সৌম্যব্রত দাস বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমরা পরস্পরকে জানি ও চিনি। দেশ পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু ধর্ম ও ভাষা পরিবর্তন হতে পারে না। দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে পরস্পরকে জানতে যে আবেগ রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে আটকে রাখতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে, জসিম উদ্দিন-শামসুদ্দিনকে ভাগ করা যায় না।

বক্তারা আরো বলেন, রাজশাহীর সাথে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুন্দর হলে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। দুই দেশের মধ্যে এই প্রীতি সম্মিলনের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।

অনুষ্ঠানে ভারতের অতিথিরা রাজশাহীর পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন ও সৌন্দর্য্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাজশাহীতে সৌন্দর্য্যরে প্রতীক আখ্যায়িত করে অতিথিরা বলেন, সত্যির অর্থে রাজশাহী গ্রিন ও ক্লিন সিটি। প্রতিটি প্রশস্ত রাস্তা ও সড়ক বিভাজকে ফুলের সমাহার। পদ্মাপাড়কে সুন্দর করে সাজানো। এসব দেখেই বোঝাই যায় রাজশাহীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে।

সভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও রাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক, কবিকুঞ্জের সভাপতি প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম।

এরআগে সকাল ১১টায় সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ও কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সমাধিতে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ভারতীয় অতিথিরা। এরপর বরেন্দ্র জাদুঘর, রাজশাহী কলেজ ও টিবাঁধ ও লালনশাহ মুক্তমঞ্চ পরিদর্শন করেন অতিথিরা। সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর আলোকায়ণ সহ নগরী পরিভ্রমণ করেন তাঁরা।

এ সময় বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক কবির আরিফুল হক কুমার, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তানবিরুল আলম, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোকবুল হোসেন, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল আওয়াল খান চৌধুরী জ্যেতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকাল ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি স্মারকস্তম্ভ ও শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা পরিদর্শন, শহীদ অধ্যাপক শামসুজ্জোহার সমাধীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, আই-ই-আর এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ পরিদর্শন করবেন ভারতীয় অতিথিরা। এরপর রাজশাহী থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ী, তাহিরপুর দূর্গামন্দির, নাটোর রাজবাড়ী, উত্তরা গণভবন, বাঘা মসজিদ ও মাজার পরিদর্শন করবেন। দুই দিনের এই সফর শেষে বুধবার (২২ মার্চ) রাজশাহী ত্যাগ করবেন তাঁরা।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]