নৌযান বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াল জাহাজ মালিকপক্ষ


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 19-03-2023

নৌযান বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াল জাহাজ মালিকপক্ষ

দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরটি আপাতত সংকটমুক্ত হয়েছে। তবে জাহাজ মালিকেরা শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন–ভাতা পরিশোধ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ঈদের পরপরই ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকরসহ সংকটের স্থায়ী সুরাহা করা না হলে জাহাজ মালিকেরা কঠোর কর্মসূচি নেবেন বলে গতকাল জানিয়ে দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে শ্রম অধিদপ্তর শ্রমিকদের মজুরি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেয়। শ্রম দপ্তরের ওই ঘোষণার প্রতিবাদ করে জাহাজ মালিকেরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসলেও বর্ধিত মজুরির গেজেট প্রকাশ করা হয়। শ্রম দপ্তরের এই সিদ্ধান্তকে লাইটারেজ শ্রমিক ফেডারেশনসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু শুরু থেকে এর প্রতিবাদ করে জাহাজ মালিকদের সংগঠনগুলো। শ্রমিকদের বক্তব্য হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বেতন ভাতা না বাড়লে তাদের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই শ্রম দপ্তর অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে বেতনভাতা বৃদ্ধি করে শ্রমবান্ধব একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু জাহাজ মালিকেরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলেছেন যে, আমদানি কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চলাচলকারী জাহাজগুলোর আয় কমেছে। দুই মাসেও এক ট্রিপ পায় না বহু জাহাজ। ভাড়ার অভাবে জাহাজ মালিকেরা কর্মকর্তা–কর্মচারীদের স্বাভাবিক বেতন ভাতা যোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যাংক ঋণের সুদের যোগান দিতে পারছেন না। এমতাবস্থায় এক লাফে ৬০ শতাংশ বেতন মজুরি বাড়িয়ে এই সেক্টরটিকে ধ্বংস করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জাহাজ মালিকেরা সাংবাদিক সম্মেলন করে ১৮ মার্চের মধ্যে গেজেট প্রত্যাহারসহ ইতোপূর্বে মিল মালিকদের সাথে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করার দাবি জানান। অন্যথায় ১৮ মার্চ মধ্যরাত থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত মধ্যরাত থেকে সারাদেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুইদিন ধরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়সহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু করে।

বিশেষ করে রমজানকে সামনে রেখে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে সংকট সৃষ্টি হবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি দাওয়ার বিষয় নিয়ে ঈদের পরে বৈঠক করে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জাহাজ মালিকদের আশ্বাস দেয়া হয়। সরকারের এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গতকাল কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন বৈঠক করে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে। তবে ঈদের পরপরই সরকার, মিল মালিক এবং লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকরসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা। অন্যথায় ঈদের পরই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও গতকাল এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উক্ত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নেয়া চারটি সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম ছিল সিমেন্ট কারখানার মালিকেরা তাদের নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য পরিবহন করবে। নিজ নামে তারা অন্য কোনও ফ্যাক্টরি বা গ্রুপ অব কোম্পানির জাহাজ ব্যবহার করে ক্লিংকার পরিবহন করতে পারবে না।

কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কনভেনর নুরুল হক বলেছেন, সব জাহাজকে একই সিরিয়ালভুক্ত করে চালানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা কার্যকর করার পরই কেবলমাত্র শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারটি আলোচনা করা যাবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের এক টাকাও বেতন বাড়ানোর সুযোগ নেই বলেও তিনি দাবি করেন। অপর জাহাজ মালিক শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, এই সেক্টরের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। আমরা দেউলিয়া হওয়ার পথে। এই অবস্থায় আমাদের অনেকেই জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রি করে ফেলেছেন। প্রয়োজনে আমরা লে অফ ঘোষণা করে জাহাজ ব্যবসা থেকে সরে আসবো। কিন্তু এখন বর্ধিত বেতন পরিশোধের কোনও সুযোগই নেই। ঈদের পরে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের উপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জাহাজ মালিকদের এই নেতা মন্তব্য করেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]