দুনিয়ার মোহ থেকে বাঁচার উপায়


ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট: , আপডেট করা হয়েছে : 18-03-2023

দুনিয়ার মোহ থেকে বাঁচার উপায়

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট, তাতেই পরিতৃপ্ত এবং যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্পর্কে উদাসীন তাদেরই আবাস জাহান্নাম তাদের কৃতকর্মের জন্য।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৭-৮)

আলোচ্য আয়াতে সেসব মানুষের নিন্দা করা হয়েছে, যারা আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার বিশ্বাস করে না। যদিও মুমিন আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার বিশ্বাস রাখে, তবে এতে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। অবিশ্বাসের দোষ না থাকলে শাস্তি কিছুটা কমবে ঠিক; কিন্তু অন্য দোষগুলো থাকলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আয়াতে মোট চারটি দোষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর দোষগুলোর শাস্তিস্বরূপ বলা হয়েছে, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সুতরাং বোঝা গেল প্রতিটি দোষই জঘন্য ও নিন্দনীয়। এর প্রত্যেকটি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

চারটি দোষের মধ্যে প্রথমটি থেকে মুমিনরা মুক্ত আর শেষটির ব্যাপারে সন্দিহান। কেননা আল্লাহর বিধান ও নির্দেশনাবলির ব্যাপারে অমনোযোগিতা দুই প্রকার :

১. বিশ্বাসের অভাবে অমনোযোগী হওয়া এবং তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা। মুমিন এই প্রকারের অমনোযোগিতা থেকে মুক্ত।

২. সাধারণ অমনোযোগিতা। এতে মুমিনরাও লিপ্ত থাকে।

মধ্যবর্তী দুটি দোষে মুমিনরাও আক্রান্ত। বাহ্যত দোষ দুটি এক, তবে উভয়টির মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। সন্তুষ্টি জ্ঞানপ্রসূত আর নিশ্চিন্ততা স্বভাব-উদগত। অনেক সময় একটি বিষয় জ্ঞানের অনুকূল হয়; কিন্তু স্বভাব তা পছন্দ করে না। যেমন তিক্ত ওষুধ রোগ নিরাময়ের জন্য কিংবা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় শহীদ হওয়া জ্ঞানের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য, তবে স্বভাব তা পছন্দ করে না। আবার কোনো কোনো বিষয় স্বভাবের কাছে লোভনীয়; কিন্তু জ্ঞান তা সমর্থন করে না। যেমন ব্যভিচার। মোটকথা কোনো ক্ষেত্রে সন্তুষ্টি ও তৃপ্তি একত্রে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। তাই কোনো কিছুর ব্যাপারে সন্তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি একত্র হওয়ার অর্থ তা গুরুতর। পার্থিব জীবন নিয়ে অবিশ্বাসীরা সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত; বরং বেশির ভাগ মুমিনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। যে ক্ষেত্রে দ্বিন ও দুনিয়ার স্বার্থে বিরোধ দেখা দেয়, যেমন মিথ্যা মামলা, ঘুষ গ্রহণ, অন্যের ভূমি জবর দখল ইত্যাদি। এসব বিষয়কে সবাই পাপ বলে স্বীকার করে। তার পরও মনে মনে তা পছন্দ করে এবং তাতে লিপ্ত হতে কুণ্ঠা করে না।

একইভাবে প্রাথমিক স্তরের শিশুকে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করলে দ্বিনি জ্ঞান সম্পর্কে শিশুরা সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ থেকে যায়। অথচ জেনে-শুনে তা গ্রহণের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে—প্রাথমিক স্তরে শিশুকে আধুনিক শিক্ষা না দিলে তারা জীবনে উন্নতি করবে কিভাবে? এটাকেই বলে পার্থিব জীবনে সন্তুষ্ট হওয়া। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই মনোভাব এখন আলেম-দরবেশদের ভেতরও দেখা যায়। অথচ তাদেরই বেশি সতর্ক হওয়ার কথা ছিল। দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির ক্ষতিগুলো থেকে খুব কম মানুষই মুক্ত।

দুনিয়াদার পার্থিব জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং দুনিয়াও তাদের অন্তরে ঢুকে পড়েছে। এ অনুরাগ তাদের অন্তর থেকে বের করা কঠিন। মূলত পার্থিব জীবনের প্রতি সামান্য আকর্ষণ টের পেলেই প্রত্যেক মুসলমানের প্রাণ আঁতকে ওঠা উচিত। এখন হিসাব করে দেখুন, আপনার প্রাণ দৈনিক কয়বার আঁতকে উঠেছে? এ জন্য মনে কোনো ভয়ের উদয় হয়েছে কি না? অথচ দুনিয়ার সঙ্গে মুমিনের সম্পর্ক হওয়া উচিত ছিল মুসাফিরখানার (যেখানে পথিক বিশ্রাম নেয়) সঙ্গে মুসাফিরের সম্পর্কের মতো। মুসাফির এখানে তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করে বটে; কিন্তু তার মন পড়ে থাকে বাড়িতে। মুসাফিরখানা যত আরামদায়কই হোক না কেন কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এখানে থেকে যাওয়ার চিন্তা করে না। কেউ যদি এমনটি করে তবে তাঁকে সবাই নির্বোধ ছাড়া কিছুই বলবে না।

কোনো এক কবি বলেছেন, ‘সেদিন কতই না আনন্দের হবে, যেদিন আমি এই অস্থায়ী বাসঘর পরিত্যাগ করে যাব এবং প্রিয়জনের কাছে গিয়ে আত্মার শান্তি কামনা করব। আমি মানত করছি যে যেদিন এ চিন্তার অবসান ঘটবে (দুনিয়া থেকে বিদায়), সেদিন আনন্দচিত্তে গান গাইতে গাইতে শরাবখানার দ্বারদেশ পর্যন্ত চলে যাব।’

যারা দুনিয়াতে স্বরূপে চেনে, তারা মানত করে এখান থেকে বিদায়ের পর জীবন উপভোগ করব। দুনিয়ার মোহ থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে। তা হলো : ১. প্রতিদিন নির্ধারিত সময় মৃত্যুকে স্মরণ করা, ২. কবরের অবস্থা স্মরণ করা, ৩. হাশরের কথা স্মরণ করা, ৪. হাশরের ময়দানের যাবতীয় ভয়াবহ অবস্থা ও কষ্টের কথা স্মরণ করা, ৫. এটাও চিন্তা করা যে আমাকে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে দাঁড় করানো হবে, ৬. আমার যাবতীয় কাজের হিসাব-নিকাশ করা হবে, ৭. এক-এক করে সমস্ত হক আদায় করা হবে, ৮. এরপর কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে আমাকে।

কেউ যদি প্রতি রাতে শোয়ার সময় এই চিন্তাগুলো করে আল্লাহর দরবারে, আশা করা যায়, দুই সপ্তাহের মধ্যে তার অবস্থার পরিবর্তন হবে। দুনিয়ার প্রতি যে নিশ্চিন্ত মনোভাব, অনুরাগ ও আকর্ষণ বিদ্যমান আছে, তা লোপ পাবে। (সংক্ষেপিত)

মাওয়ায়েজে আশরাফি থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাষান্তর


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]