ড. ইউনূসের আয়কর নথি নিয়ে এনবিআর ও দুদক তৎপর


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 17-03-2023

ড. ইউনূসের আয়কর নথি নিয়ে এনবিআর ও দুদক তৎপর

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আয়কর নথি নিয়ে তৎপর হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদের ব্যক্তিগত এবং তার প্রতিষ্ঠিত ৯টি প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে এনবিআরের কাছে চিঠি দিয়েছে দুদক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনবিআরের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট সার্কেল এবং জরিপ দপ্তরকে মৌখিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এনবিআরে পাঠানো দুদকের চিঠি থেকে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে দলনেতা করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ৯টি প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে এনবিআরের কর অঞ্চল ১৪-এর আওতাধীন সার্কেল ২৮৭-এর উপকর কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে এই কমিটি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট, গ্রামীণ নিটওয়্যার, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিস এবং গ্রামীণ ফ্যাশন অ্যান্ড ফেব্রিকসের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং ইউনুস ফ্যামিলি ট্রাস্টের দানকর সম্পর্কিত তথ্য চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি।

সূত্র জানায়, এনবিআরের কর অঞ্চল ১৪ এর সার্কেল ২৮৭ মূলত কোম্পানির আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালন করে। উল্লিখিত কোম্পানিগুলো এই সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে। এ কারণেই দুদক থেকে সরাসরি এই সার্কেলের উপকমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান কমিটির দলনেতা গুলশান আনোয়ার প্রধান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গ্রামীণ টেলিকমসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল আয়কর রিটার্নের কপি এবং বার্ষিক কত টাকা কর দিচ্ছে সে সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো অডিট করা হয়েছে কিনা এবং করা হলে তার সকল অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়াকপি পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো আয়কর মামলা থাকলে সে বিষয়ে সব রকম ডকুমেন্ট, মামলার রায়ের কপি এবং আপিল হলে সে বিষয়ে সমুদয় রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কমিটি। পাশাপাশি সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগ থেকে বর্তমানে কোনো অনুসন্ধান চলমান আছে কি না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে ড. ইউনূস এবং তার দুটি ট্রাস্টের দানকর সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের ফটোকপি এবং এই তিনটি নথির পরিস্থিতি পত্র সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদক।

এনবিআর সূত্র জানায়, প্রায় আড়াই মাস আগে দুদক থেকে এই চিঠি দেওয়া হলেও কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের তৎপরতা বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত এই চিঠির চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর জরিপ বা পরিদর্শনে এ বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কি না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। যদি এ সংক্রান্ত্র কোনো তথ্য-উপাত্ত কর জরিপে থেকে থাকে, তা দ্রুত দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে নথি আকারে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আয়কর নথির বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন এনবিআরের ঊধ্বতন কর্মকর্তারা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়কর সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কর জরিপ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মো. মাহমুদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে এনবিআর সরাসরি কাজ করছে না। তবে কর অঞ্চল-১৪-এ নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে।’

কর অঞ্চল-১৪-এর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, দুদকের তদন্ত কমিঠি এই সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি এই কর্মকর্তা।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে গত ডিসেম্বরে দুদক ও এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বৈঠকে বিদেশে ড. ইউনূসের কোনো ধরনের সম্পদ রয়েছে কি না, তা জানতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এনবিআরের কাছে চিঠি দেয় দুদকের অনুসন্ধান কমিটি।

এদিকে আয়কর সংক্রান্ত অনিয়ম ছাড়াও ড. ইউনূসের কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে দুদক।

এ বিষয়ে জানতে দুদকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]