যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা উধাও, তোলপাড়


ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 15-03-2023

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা উধাও, তোলপাড়

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যাংক হিসাব থেকে দেড় কোটি টাকা (১ লাখ ৪৬ হাজার মার্কিন ডলার)উধাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ করে মোটা অংকের সন্দেহজনক লেনদেনসহ উক্ত হিব নম্বরটি বন্ধ করে দেয়ার প্রেক্ষিতে বিষয়টি দূতাবাসের উচ্চ পর্যায়ের নোটিশে আনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

ওয়াশিংটন ডিসিতে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে (ট্রানজিশন পিরিয়ডে) ওই ঘটনা ঘটে। যা সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার নজরে এসেছে। এ নিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। অনেকটা নীরবেই তদন্ত শুরু হয়েছে। দায়িত্বশীলরা জানার চেষ্টা করছেন-কী অজুহাত দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ওই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে, এর ব্যয় কীভাবে দেখানো হয়েছে? অর্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া এবং কার কার মধ্যে এটি ভাগবাটোয়ারা হয়েছে তা-ও খোঁজা হচ্ছে।

সেভিংস ফর ইমার্জেন্সি বা দুর্যোগ তহবিল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকে ওয়াশিংটনের দূতাবাসের পৃথক একটি অ্যাকাউন্ট ছিল। বহু বছর ধরে জমা হওয়া ওই অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ডলার জমা পড়েছিল। সুদ-আসল মিলেই তহবিলটি বেশ সমৃদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা।

দেশের যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তহবিলটি ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে ৪ দিনে পুরো অ্যাকাউন্ট খালি করা হয়। এর মধ্যে একদিনেই ৩টি লেনদেনে উত্তোলন করা হয় ৪০ হাজার ডলার। ২৬শে অক্টোবর ২০২০ এটি সংঘটিত হয় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে। ৩ দিন বিরতি দিয়ে ২৯শে অক্টোবর ’২০ অ্যাকাউন্ট থেকে দ্বিতীয় দফায় অর্থ উত্তোলন করা হয়। ওই দিন তোলা হয় আরও ১০ হাজার ডলার। পরের মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালের নভেম্বরে দুই দিনে ৬টি ট্রানজেকশনে ৯৩ হাজার ডলার উত্তোলন করে অ্যাকাউন্টটি খালি করা হয়। ১১ই নভেম্বর তোলা হয় ৪৮ হাজার ৮ শ’ ডলার। আর ২৪শে নভেম্বর তোলা হয় ৪৫ হাজার ডলার। ডকুমেন্টে দেখা যায়, সেই বছরের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স ছিল ২ হাজার ৭শ’ ৫১ ডলার। যা পরবর্তীতে উত্তোলন করার মধ্যদিয়ে অ্যাকাউন্টটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।

যেভাবে ঘটনাটি ফাঁস হলো: যেকোনো দূতাবাসের আয়-ব্যয়ে একটি অ্যাকাউন্ট থাকে। যাকে মাদার বা মূল অ্যাকাউন্ট বলা হয়। সরকারের অনুমতি নিয়ে বাড়তি অ্যাকাউন্ট খোলা বা বন্ধ করতে হয়। ‘সেভিংস ফর ইমার্জেন্সি’ ছিল ওয়াশিংটন মিশনের স্বতন্ত্র অ্যাকাউন্ট। যার নাম্বার ছিল সিটি বিজনেস আইএমএমএ-১৫২৮৩৩২১।

জানা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ইমার্জেন্সি ওই হিসাব খোলা হয়েছিল। শুরুতেই এতে জমা হয়েছিল বেশ অর্থ। কিন্তু অনেকদিন এতে লেনদেন না হওয়ায় অনেকটা ফ্রিজ বা স্থিতাবস্তা ছিল। আচমকা এই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন এবং চটজলদি ৪টি লেনদেনে অ্যাকাউন্টটি খালি করে ফেরায় সন্দেহ হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। তাৎক্ষনিক তারা তা দূতাবাসের নোটিশে আনে। কিন্তু দু’মাসের ব্যবধানে তা পুরোপুরি ক্লোজ করে ফেলা হয়। দূতাবাসের তৎকালীন হেড অব চ্যান্সারি (ডিডিওর বাড়তি দায়িত্ব) ছিলেন ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। তার স্বাক্ষরে ব্যাংকের হিসাবটি ক্লোজ করা হয়। এতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ আরও বাড়ে এবং ব্যাংক ও দূতাবাসের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে বিষয়টি সম্প্রতি ঢাকার নজরে আসে।

এ ব্যাপার ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কাউকে পাওয়া যায়নি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]