মৃত্যুর ৪০ দিন পর কোরআন খতম করার বিধান কী?


ধর্ম ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 06-03-2023

মৃত্যুর ৪০ দিন পর কোরআন খতম করার বিধান কী?

কোনো কোনো সমাজে প্রচলিত আছে, কেউ মারা গেলে তিনদিন বা চল্লিশদিন পর কোরআন খতম করা হয়। আবার কেউ কেউ চল্লিশা পালন করে থাকেন। এ ব্যাপারে ইসলামি শরিয়ত কী বলে?

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমিন রাহেমাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চল্লিশ দিনের মাথায় মৃতের জন্য কোরআন খতম করার হুকুম কী?

তিনি বলেছেন, ‘এটি মানুষের বানানো একটি বিদআত আমল। মৃত্যের চল্লিশ দিন হয়ে গেলে তার বাড়িতে আয়োজন করে যেখানে কোরআন খতম করা হয়— সেটি মূলত নিষিদ্ধ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি।

তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় দিয়ে কোরআন খতম করালে বিনিময় দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের গুনাহ হবে। এবং এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোনো সওয়াব হবে না।

তবে কেউ মারা গেলে তার রুহের মাগফেরাত উপলক্ষ্যে ঈসালে সওয়াব করা একটি সুন্নত কাজ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে কবরের কাছে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ তাআলার কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো ও দোয়া করো, যেন তাকে এখন (প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। (আবু দাউদ ৩২২১)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা এবং তার অবিচলতার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করা শরয়ি নিয়ম; বিদআত নয়। আর জীবিত ব্যক্তির দোয়া মৃত ব্যক্তিদের উপকার দেয়। জীবিতরা মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করতে পারেন।

‘ঈসালে সওয়াব’ ফারসি শব্দ। আর আরবি হচ্ছে ‘ঈসালুস সাওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবিতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ইহদাউস সাওয়াব’)। এর আভিধানিক অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈসালে সওয়াব হল কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা।

কষ্টার্জিত আমলের সওয়াব যে কাউকে দান করা হয় না। এ সাধারণত তাকেই দান করা হয় যার প্রতি মহব্বত ও আন্তরিকতা আছে। প্রিয়জন আখেরাতের পথিক হয়ে গেলে তার জন্য এমন কিছু করা মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ, যা তার শান্তি-সফলতার পক্ষে সহায়ক হবে, তার জন্য আল্লাহর রহমত ও করুণার উপায় হবে। ফলে তিনি তার গুনাহ মাফ করে দিবেন, মর্যাদা উঁচু করবেন এবং সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে তুলবেন।

এই মহব্বতের একটি অনুষঙ্গ হল আত্মীয়তা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ঈমান, সৎকর্ম ও সদ্ব্যবহার। এজন্য পিতা-মাতা, দাদা-দাদী প্রমুখের জন্য যেমন ঈসালে সওয়াব করা হয়, তেমনি উস্তাদ-মুরব্বি, আলেম-উলামা, ওলি-বুযুর্গ ও নবি-রাসুলগণের জন্যও করা হয়; বরং ঈমান, সৎকর্ম ও সদাচারে যারা অগ্রগামী তাদের জন্যই বেশি ঈসালে সওয়াব করা হয়। কোনো নেক লোকের সঙ্গে ঈসালে সওয়াবের সম্পৃক্ততাও সৌভাগ্য বৈকি?

এ কারণে সবার গুরুত্ব ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত ঈমান, সৎকর্ম ও  উত্তম আচার-ব্যবহারে অগ্রগামিতা এবং তা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

তাছাড়া মৃতদের জন্য মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করাও ইসলামি শরিয়তে একটি স্বীকৃত বিধান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وَ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ

‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে- ‘হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে— তাদের ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

হজরত নুহ আলাইহিস সালাম বলেন-

رَبِّ اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنۡ دَخَلَ بَیۡتِیَ مُؤۡمِنًا وَّ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ؕ وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا تَبَارًا

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বলেন-

رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ

‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদের ক্ষমা করে দিবেন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)

আল্লাহ তাআলা মুমিন নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছেন। মানুষ ঈসালে সওয়াবের মাধ্যমে মানুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَاعۡلَمۡ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۡۢبِکَ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مُتَقَلَّبَکُمۡ وَ مَثۡوٰىکُمۡ

‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ১৯)


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]