ছাত্রীকে যৌনহয়রানী ও কুপ্রস্তাবের অভিযোগ মির্জা নার্সিং কলেজের পরিচালকের বিরুদ্ধে


মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: , আপডেট করা হয়েছে : 04-03-2023

ছাত্রীকে যৌনহয়রানী ও কুপ্রস্তাবের অভিযোগ মির্জা নার্সিং কলেজের পরিচালকের বিরুদ্ধে

ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব ও যৌনহয়রানীর অভিযোগে মির্জা নার্সিং কলেজের পরিচালকের বিরুদ্ধে আরএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ছাত্রী (২২)। 

তিনি রাজশাহীর তানোর থানার তানন্দ গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার তেরখাদিয়া এলাকায় থেকে মির্জা নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করছেন। 

অভিযোগের বরাত দিয়ে জানা যায়, মির্জা নার্সিং কলেজের পরিচালক মির্জা আবু মোহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম ফারুক তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তাতে কিন্তু রাজি না হওয়ায় ছাত্রীকে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।

তিনি গত (৪ জুলাই ২০২০) ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে মির্জা নার্সিং কলেজে ভর্তি হন। চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। গত (২৯ মে) ক্লিনিক্যাল প্র্যাক্টিস এবং পরিচালক কর্তৃক যৌন হয়রানি বন্ধে আন্দোলন হয় কলেজটিতে। ওই আন্দোলনে উপস্থিত থাকার জন্য শান্তি স্বরুপ ২ মাস ২০ দিন (১ জুন ২২ হতে ১৯ আগস্ট ২০২২) পর্যন্ত ছাত্রীকে ক্লাস করতে দেয়নি রাজশাহী এবং শহরেও থাকতে দেয়নি। কলেজ থেকে তিন বার ফোনকলে অভিভাবক-সহ ডেকে নানাভাবে অপমান অপদস্ত হয়রানি এবং হুমকিও দেয়া হয়। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের কথা না শুনলে পরীক্ষায় ফেল করানো-সহ ছাত্রত্ব বাতিল করবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।

এখানেই শেষ নয়, ছাত্রীকে সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। ভুক্তভোগী সবকিছু মেনে নিয়ে গত (২০ আগস্ট ২০২২) থেকে আবারও ক্লাস শুরু করে ছাত্রী। কলেজ চলাকালিন সময়ে পরিচালক নিজে তার রুমে ডেকে অপ্রীতিকর ভাষায় কথা বলেন, হাত ধরে, শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করলে বলেন, কলেজ থেকে বের করে দিবো। প্রত্যেক ছাত্রী তার কথা মতো চলে, তাই তাকেও চলতে হবে। ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। বলে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে, মন খারাপ থাকলে তার সাথে ফোন দিয়ে কথা বলতে, ফ্রি থাকলে বা সময় থাকলে তার সাথে আড্ডা দিতে হবে। সময় দিলে কলেজে টিউশন ফি বাবদ কোনো টাকা দিতে হবে না বলেন কর্তৃপক্ষ। তিনি একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে একটি মেস বানিয়ে দুস্থ ও অসহায় মেয়েদের সেখানে রাখেন। নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেন কর্তৃপক্ষ। তার কথার বাইরে গেলে ছাত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেন। 

কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে তিনি রাজি না হওয়ায় টিউশন ফি বাবদ যে চুক্তি ছিল তা অস্বীকার করে আরও বাড়তি টাকার চাপ দিচ্ছে। এমসি কর্তৃক নির্ধারিত বোর্ড ফি ২২০০ টাকা হওয়া শর্তেও প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। 

বাড়তি টাকার কারণ জানতে চাইলে নিজ দায়িত্বে নিজেদের কে ফরম ফিলাপ করে নিতে বলছেন। ফরম ফিলাপের জন্য ৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরেও বলছেন, ফর্ম ফিলাপ না হলে তার দায়ভার কর্তৃপক্ষ নিতে অস্বীকার করছেন। 

৯০হাজার টাকা টিউশন ফি বাবদ কেটে নিয়ে রশিদ প্রদান করেন। ফরম ফিলাপের টাকা গত (১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩) অথচ ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ফোন দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে কর্তৃপক্ষ বলেন, ওই দিন তোমার ফরম ফিলাপ হয়নি। ৯০ হাজার টাকা প্রদান করলে ফরম ফিলাপ হবে এবং ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে। তাছাড়া পরীক্ষায় দিতে দিবে না বলে হুমকি দেয় কর্তৃপক্ষ। বাসা থেকে অবিভাবক আসলে তার সাথে কথা না বলে কর্তৃপক্ষ অপমান অপদস্থ এবং হুমকি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়।

সার্বিক বিষয়ে বিবেচনা করে আগামী ১৩ মার্চ ২০২৩ ফাইনাল পারিক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে দিতে এবং যাবতীয় হয়রানী বন্ধে আরএমপি পুলিশ কমিশনারকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আর্জি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

এ ব্যপারে জানতে মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও মির্জা নার্সিং কলেজের পরিচালক হাসিব আবু ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী (২২) অভিযোগের সত্যতা স্বিকার করে জানান, গত ২ মার্চ বৃহস্পতিবার আরএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করিছি। আমি শুধু পরিক্ষা দেয়ার সুযোগ চাই। তবে আমাকে যদি পরিক্ষা দিতে না দেয় কর্তৃপক্ষ। তাহলে আমি সহ সক ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাবো। এতে আমার মৃত্যু হলে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমার বক্তব্য আমার অভিযোগের কপিতে রয়েছে। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাইনা।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার এসআই মোঃ আব্দুল জলিল। তিনি জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার মা’এর সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে, যা হবার হয়েছে। আমরা গবির মানুষ, লোক জানাজানি হলে মানসম্মান যাবে। তাই পরিচালকের সাথে কথা বলে পরিক্ষা দেয়ার সুয়োগ করে দিন। এসআই আরও জানান, পরিচালকের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উল্টা দাম্ভিকতা প্রকাশ করে এটা সেটা বলছেন। আপাতত বিস্তারিত বলছি না। দেখা যাক কি করা যায়। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]