উত্তর কোরিয়ার খাদ্য সংকট পরিস্থিতি ক্রমেই দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ খাদ্য সংকট দেশটিতে প্রাণহানিরও কারণ হতে পারে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন, উত্তর কোরিয়া দেশটির ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ১৯৯০-এর দশকের এক দুর্ভিক্ষে দেশটির ২ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ থেকে ৫ শতাংশই মারা গিয়েছিলেন বলে ধারনা করা হয়। এবারও সে পথেই চলছে দেশটি। চলতি মাসকে ‘কঠিনতম মার্চ’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকস জানিয়েছে, জাতিসংঘ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক তথ্য এবং স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, উত্তর কোরিয়ায় যে পরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন দেশটিতে তার চেয়ে অনেক কম সরবরাহ রয়েছে।
পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের গবেষক রেনিফো-কেলার বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে যেখানে অভিজাত এবং সামরিক কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়া হয় সেখানে যদি এখন খাদ্য সবার জন্য সমানভাবেও বিতরণ করা হয় তারপরও ক্ষুধাজনিত কারণে মানুষের মৃত্যু দেখতে হতে পারে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা উপরোক্ত মূল্যায়নের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান, উত্তর কোরিয়ার কিছু অঞ্চলে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যদিও উত্তর কোরিয়ার বিচ্ছিন্নতার কারণে এই দাবিগুলোর পেছনে শক্ত প্রমাণ হাজির করা কঠিন। তারপরও এসব মূল্যায়ন নিয়ে উপহাসের সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, কোভিড মহামারির আগেই উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই অপুষ্টিতে ভুগছিল। কোভিড পরিস্থিতির পর এই অবস্থা আরও খারাপের দিকে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এর আগে, তীব্র খাদ্য সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন দেশটির সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কৃষি উৎপাদনে ‘মৌলিক রূপান্তর’ সাধনের নির্দেশনা দেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির অষ্টম কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী কমিটির বর্ধিত বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে এই নির্দেশনা দেন কিম।
বৈঠকে কিম জং উন বলেন, এ বছর শস্য উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করা সর্বোচ্চ জাতীয় অগ্রাধিকার। এ সময় তিনি স্থিতিশীল কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বের প্রতি জোরারোপ করেন। তবে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদনে ‘মৌলিক রূপান্তর’ কীভাবে সাধিত হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি। তবে বলেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন সাধিত হওয়া চাই।