ঋণখেলাপিরা সিআইপি হতে পারবেন না


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 01-03-2023

ঋণখেলাপিরা সিআইপি হতে পারবেন না

ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের সিআইপি না করার বিধান রেখে নীতিমালা তৈরি করছে সরকার। এ ছাড়া রাজস্ব বকেয়া রয়েছে, বৈদেশিক ক্রেতার সঙ্গে বিরোধ এবং আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হলে সিআইপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। 

 

নতুন এই সিআইপি নীতিমালা শিগগির জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 

 

বর্তমানে দুটি ক্যাটাগরিতে সিআইপি নির্বাচিত করা হয়। একটি হচ্ছেÑপণ্য ও সেবার আয়ের ভিত্তিতে, অপরটি পদাধিকার বলে নির্বাচিত সিআইপি ট্রেড হিসেবে বিবেচিত হবেন। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিলিয়নের বেশি রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ পাঁচজন সিআইপি নির্বাচিত হবেন। ১০ থেকে ৫০ মিলিয়ন পর্যন্ত রফতানির আয়ের ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ চারজন নির্বাচিত হবেন। আর ১০ মিলিয়ন কম রফতানির আয়ের ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ তিনজন সিআইপি নির্বাচিত হবেন। আর সিআইপি ট্রেডের সংখ্যা এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকরা নির্বাচিত নির্বাচিত হবেন। 

 

প্রচলিত সিআইপি নীতিমালা নতুন করে তৈরির উদ্যোগ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, করোনাকালে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বেশ কিছুটা ব্যাহত হয়। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ সময় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। 

 

জানা গেছে, সিআইপি রফতানি খাতভিত্তিক বিভাজনে ও ন্যূনতম রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত ২২ থেকে ৩৫টি পণ্য বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে রফতানি আয়ের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। কাঁচা পাটের জন্য আগে ছিল ন্যূনতম আয় ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় তা করা হচ্ছে ৫ মিলিয়ন ডলার। একইভাবে পাটজাত দ্রব্যের জন্য আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় করা হচ্ছে ১০ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে বহুমুখী পাটজাত পণ্য। 

 

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য ন্যূনতম আয় আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় চামড়া ক্ষেত্রে ১০ মিলিয়ন ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার করা হচ্ছে। হিমায়িত খাদ্য, চা ও ওভেন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় হিমায়িত খাদ্যের জন্য ১০ মিলিয়ন, চায়ের জন্য কিছুটা কমিয়ে ১ মিলিয়ন ডলার ও ওভেনের জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার করা হচ্ছে। 

 

কৃষিজাত পণ্যের জন্য আগে ছিল শূন্য দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় ১ মিলিয়ন ডলার করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে তামাক অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। অ্যাগ্রোপ্রসেসিং পণ্যের জন্য আগে ছিল ০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় করা হচ্ছে ১ মিলিয়ন ডলার। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টসের জন্য আগে ছিল ০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় বেশ কিছু পণ্য অন্তর্ভুক্ত হয়ে দাঁড়াবে ৪ মিলিয়ন ডলার। নতুন পণ্য হিসেবে যোগ হচ্ছে, সাইকেল, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল। 

 

ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্টসের ক্ষেত্রে আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় যোগ হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী। আর রফতানি আয়ের ন্যূনতম পরিমাণ হচ্ছে ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন পণ্য হিসেবে যোগ হচ্ছে একুমুলেটরস অ্যান্ড ব্যাটারি। যেখানে ১ মিলিয়ন ডলার রাখা হচ্ছে। হস্তশিল্পের জন্য আগে ছিল ০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিতে কারুপণ্য যোগ হচ্ছে। একই সঙ্গে ন্যূনতম আয়ের পরিমাণ করা হচ্ছে ১ মিলিয়ন ডলার। 

 

স্পেশালাইজড দ্রব্যের জন্য আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় তা করা হচ্ছে ৫৫ মিলিয়ন ডলার। নীটওয়্যার গার্মেন্টসের জন্য আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় তা করা হচ্ছে ৭০ মিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি সব ধরনের সুতা ও ম্যান মেড ফাইবার ৩০ মিলিয়ন, ডেনিম ফেবিক্স ও ডেনিম তৈরি পোশাকের জন্য ২০ মিলিয়ন ডলার ও টেরিটাওয়ালের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার। 

 

নতুন নীতিমালায় যে সব পণ্য যোগ হচ্ছে এর ফুল ফলিয়জ, সব ধরনের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং পণ্য, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ পণ্য, নারী উদ্যোক্তার রফতানির পণ্য ও সেবা, জুয়েলারি, টয়লেট্রিজ, খেলনা ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, আউটসোর্সিং, ব্যাংকিং ইত্যাদি। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে ন্যূনতম আয়ের পরিমাণ ১ মিলিয়ন থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার। জাহাজ নির্মাণ শিল্প ক্ষেত্রে আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার। আর ন্যূনতম আয়ের পরিমাণ ২০ মিলিয়ন ডলার ধরা হচ্ছে। আসবাবপত্রে আগে ছিল ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। নতুন নীতিমালায় ধরা হচ্ছে ৩ মিলিয়ন ডলার। কম্পিউটার সফটওয়্যারে আগে ছিল ০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। 

 

নতুন নীতিমালায় আরও যে সব বিবেচনা করা হবে তা হচ্ছে, রফতানিকারক বিবেচ্য অর্থবছরে কোনো নতুন বাজার সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সিআইপি পাওয়া অযোগ্যতা নিয়ে বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর অন্যতম হলো যদি তিনি ঋণখেলাপি হন। একই সঙ্গে যদি তার কাছে কোনো রাজস্ব বকেয়া থাকে। তবে ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। এ ছাড়াও বৈদেশিক ক্রেতার সঙ্গে যদি কোনো বাণিজ্য বিরোধ থাকে। আর আদালত থেকে পাওয়া সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি সিআইপি পাওয়া থেকে অযোগ্য হবেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]