প্রেম নাকি বয়সের ধার ধারে না! তবে এই গল্পে অসমবয়সি প্রেমের কারণেই জেলে যেতে হয়েছিল প্রেমিকাকে। ভোগ করেছিলেন সাজা। ১২ বছরের ছাত্রের সঙ্গে প্রেমের বাঁধনে জড়িয়েছিলেন ৩৪ বছরের শিক্ষিকা। মেরি কে লেটোর্নিউ এবং ভিলি ফুয়ালাউয়ের সেই কাহিনি এক সময় শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।
আমেরিকার সিয়াটেলের শিক্ষিকা ছিলেন মেরি। স্বামী এবং ৪ সন্তানকে নিয়ে তাঁর ভরা সংসার ছিল। তবে একটা সময় মেরি উপলব্ধি করেন যে, স্বামী স্টিভ লেটোর্নিউয়ের প্রতি তাঁর বৈবাহিক বন্ধন যেন আলগা হয়ে গিয়েছে।
বৈবাহিক জীবনে এই টানাপড়েনে চলাকালীনই মেরির জীবনে তুফান তোলে ভিলি ফুয়ালাউ নামের এক ছাত্র। শোরউডে একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলেন ভিলি। সেই সময় থেকে ভিলিকে জানতেন মেরি। পরে ভিলি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন, তখনও আবার তাঁকে ছাত্র হিসাবে পান মেরি।
সাল ১৯৯৬। সেই বছরই ১২ বছরের ছাত্র ভিলির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ৩৪ বছরের মেরি। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই সম্পর্কে ঢুকে পড়ে অবাধ যৌনতা। শিক্ষিকা এবং কিশোর ছাত্রের এই রসায়ন একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি সে দেশের আইন।
শিক্ষিকার প্রেমের নেশায় তখন বুঁদ হয়েছিলেন ভিলি। সেই সময় এক বার গাড়ির মধ্যে ওই যুগলকে হাতেনাতে ধরেছিল পুলিশ। তবে নিজেদের বাঁচাতে পুলিশের কাছে মিথ্যা কথা বলেছিলেন তাঁরা। নিজেদের আসল নাম পর্যন্ত পুলিশকে জানাননি ওই যুগল। এমনকি, ভিলির বয়স ১৮ বলে সেই সময় পুলিশকে জানিয়েছিলেন মেরি।
মেরি পুলিশকে সেই সময় জানিয়েছিলেন যে, স্বামীর সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়েছে। ভিলি তাঁদের পারিবারিক বন্ধু। তাঁদের বাড়িতেই ছিলেন ভিলি। স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভিলি। ঝগড়া দেখে ভিলি হতাশ হয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন। গাড়িতে তাঁকে খুঁজে পান বলে জানান মেরি। তবে মেরির এই কথায় খুব একটা আশ্বস্ত হয়নি পুলিশ।
মেরি এবং ভিলিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ডাকা হয় ভিলির মাকে। ভিলির মায়ের কথাতেই তাঁদের ছাড়া হয়। তবে সেই সময় ভিলির মা জানতেন না যে, মেরির সঙ্গে তাঁর পুত্রের সম্পর্ক রয়েছে।
সে যাত্রায় মেরি এবং ভিলি পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিলেও পরে অবশ্য তাঁদের প্রেম কাহিনি ফাঁস হয়ে যায়। মেরির স্বামীর এক বন্ধু এই নিয়ে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তার পরই ১৯৯৭ সালের ৪ মার্চ গ্রেফতার করা হয় মেরিকে।
কিশোরকে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় মেরিকে। ওই বছরের ২৯ মে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মেরি। ওই সন্তানের বাবা ভিলি।
এই মামলায় মেরিকে সাড়ে ৬ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে মেরির সাজাদ মেয়াদ শর্তসাপেক্ষে কিছুটা কমানো হয়। ভিলি এবং তাঁর ৫ সন্তানের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখবেন না বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছিলেন মেরি।
কিন্তু সেই শর্ত ভাঙেন মেরি। ২ সপ্তাহ জেলে কাটানোর পর ১৯৯৮ সালে প্যারোলে মুক্ত হয়েছিলেন মেরি। সেই সময় একটি গাড়িতে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মেরি এবং ভিলিকে। পুলিশের কাছে ভিলি দাবি করেন যে, তাঁরা চুম্বন করেছেন শুধু, যৌন সঙ্গম হয়নি। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর একাধিক বার মেরি এবং ভিলি দেখা করেছেন বলে দাবি করে পুলিশ।বি।
দ্বিতীয় বার জেলে যাওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর আরও এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মেরি। সেই সন্তানও ভিলির। সেই সময় শিক্ষিকা এবং ছাত্রের এই প্রেমকাহিনি চর্চিত হয়েছিল আমেরিকায়।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছিল ভিলিকে। পড়াশোনার মাঝপথে স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। তাঁর দুই কন্যা সন্তানকে নিজের কাছে রাখেন ভিলির মা। ক্রমশ অবসাদগ্রহস্ত হয়ে পড়েন ভিলি। ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
২০০৪ সালে জেল থেকে মুক্তি পান মেরি। তার পরই মেরি এবং ভিলির প্রেমের পরিণতি ঘটে। সেই সময় ভিলির বয়স ২১। ২০০৫ সালের ২০ মে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের বিয়ের ছবি প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে।
তবে সেই সম্পর্ক টেকেনি। ১২ বছর এক সঙ্গে ঘর বাঁধার পর ২০১৭ সালের ৯ মে মেরির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন ভিলি। যদিও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। সেই সময় ডিজে হিসাবে কাজ করতেন ভিলি। আইনি সহায়ক হিসাবে কাজ করতেন মেরি।
বিচ্ছেদের ঘোষণা করে তা প্রত্যাহার করলেও ভিলি এবং মেরির সম্পর্কে ফাটল যে জোড়া লাগেনি, তার আঁচ পাওয়া যায় ২০১৯ সালে। সে বছরের অগস্ট মাসে আইনি বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। তবে মেরির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কোনও লোকলজ্জা নেই বলেই জানান ভিলি। এ-ও বলেন যে, তিনি নির্যাতনের শিকার নন।
পরের বছরই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মেরির। বয়স হয়েছিল ৫৮। বিচ্ছেদ সত্ত্বেও সেই সময় মেরির পাশে ছিলেন ভিলি। শেষ হয় তাঁদের সেই প্রেমের অধ্যায়। তবে মেরি এবং ভিলির সেই উথালপাতাল প্রেমকাহিনি ঘিরে চর্চা থামেনি।