প্রেমের টানে পাকিস্তান থেকে দুবাই, কাঠমান্ডু হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন ইকরা জিভানি। কিন্তু প্রেমিকের আসল পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই স্বপ্ন ভাঙল পাকিস্তানি তরুণীর। পরে পরিবারের তৎপরতা ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশে ফেরত পাঠানো হয় পাকিস্তানি তরুণীকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন বছর আগে লুডো খেলার সময় অনলাইনে পরিচয় হয় ২১ বছরের মুলায়ম সিং যাদব ও ১৯ বছরের ইকরা জিভানির। অল্প দিনেই সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। একপর্যায়ে প্রেমিককে কাছে পেতে ইকরা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসা পাওয়া একজন পাকিস্তানির কাছে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। উপায় না দেখে গত সেপ্টেম্বরে মুলায়ম ও ইকরা নেপালে যান, যেখানে তারা বিয়ে করেন। তারপর তারা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু যান। সেখানেই তারা একসঙ্গে বসবাস করেছিলেন।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে বিপত্তি বাধে চলতি জানুয়ারিতে। ইকরার কাছে ভারতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না। এ কারণে তার জন্য একটি জাল আধার কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন মুলায়ম।
পুলিশ জানায়, মুলায়ম প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে যেতেন, ইকরা তখন বাড়িতে থাকতেন। প্রায়শই পাকিস্তানে মায়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতেন ইকরা। এ বিষয়টি নজরে আসে পুলিশের। পরে তারা তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।
জালিয়াতি এবং যথাযথ নথি ছাড়া একজন বিদেশি নাগরিককে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনা হয় মুলায়মের বিরুদ্ধে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইকরা জিভানিকে গত রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়েছে। আর মোলায়ম বর্তমানে বেঙ্গালুরুর কারাগারে আছেন।
মোলায়ম যাদবের পরিবার ভারতের উত্তরপ্রদেশে বসবাস করেন। তারা এই গ্রেফতারের ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, এই দম্পতির গল্পটি কেবল একটি প্রেমের ঘটনা।
গ্রেফতার হওয়া মোলায়মের ভাই জিতলাল বলেন, ‘আমরা তাদের বাড়ি ফিরে আনতে চাই। আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি বুঝতে পারি। কিন্তু তারা যা করেছে সেটা স্রেফ প্রেম…আর কিছুই না।’
পুলিশও এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত। বেঙ্গালুরুর এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অবৈধ প্রবেশ এবং জালিয়াতি ছাড়াও এখানে একটা নির্ভেজাল প্রেমের গল্প আছে বলে মনে হচ্ছে।
এই প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে, কোভিড লকডাউনের সময়। মোলায়ম যাদব বেঙ্গালুরুতে একটি আইটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। জিভানি পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ শহরের ছাত্রী ছিলেন।