দীর্ঘদিন পর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে জাতীয় গ্রিডে স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে আমদানি করা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমতির দিকে। আরও কমতে থাকলে তখন কার্গোর সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত গরম পড়ে। এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রতিদিন ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।
এরই মধ্যে একটি কার্গো গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে গ্যাস সরবরাহ করছে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে প্রতি মাসে দুটি করে কার্গো বিদেশ থেকে আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। আগে প্রতিদিন ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হতো। এখন নতুন করে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন করে বাড়িয়ে প্রতিদিন ৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে দেশীয় উৎস থেকে প্রাপ্ত দুই হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হলে প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। যদিও এরপরও সংকট থাকবে। স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম আরও কমলে তখন কার্গোর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
এদিকে পেট্রোবাংলার ওয়েব সাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ড এবং বাপেক্সের আওতাধীন গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে ৮২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি শেভরন তাদের কূপগুলো থেকে ১৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। এর সঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানি ৫৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যুক্ত করে প্রায় ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি এলএনজি আমদানির চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর এক দশমিক ৮ থেকে দুই দশমিক ৫ মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) গ্যাস আমদানি করা হবে। সে প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম কার্গো আসে এলএনজি নিয়ে। ওই বছর ১১টি কার্গো আমদানি করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে ৪৩টি কার্গো, ২০২০ সালে ৪০টি, ২০২১ সালে ৩৯টি ও ২০২২ সালে ৪০টি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩টি কার্গো আমদানি করা হয়। তবে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (আরপিজিসিএল) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৪০টি কার্গো আমদানি করা হবে। এছাড়া বাড়তে পারে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি।
একই সঙ্গে ওমানের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (ওটিআই) থেকে ১০ বছর মেয়াদে প্রতি বছর এক থেকে দেড় মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়। প্রথম কার্গো আমদানি করা হয় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। ওই বছর ২০টি কার্গো, ২০২০ সালে ২৬টি, ২০২১ সালে ২৪টি, ২০২২ সালে ১৬টি কার্গো এবং চলতি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুটি কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়। ২০২৩ সালে আরও ১৬টি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এছাড়া দাম বিবেচনায় নিয়ে সুযোগমতো স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হতে পারে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে আরপিজিসিএল সরকার। আরপিজিসিএল সূত্রে জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সর্বমোট ২৯টি কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।