দান কবুল হওয়ার আবশ্যিক শর্ত


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 22-02-2023

দান কবুল হওয়ার আবশ্যিক শর্ত

দান তথা আল্লাহর পথে ব্যয়ের মধ্যে মুসলিম সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে। কিন্তু সেই দান মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। নিম্নে সেসব শর্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

সম্পদ পবিত্র ও হালাল হতে হবে : পবিত্র সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে। দান করতে হবে হালাল অর্থ থেকে। হারাম সম্পদ থেকে কোটি টাকা দান করলেও সওয়াবের আশা করা যাবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা হালাল ও পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা যা উপার্জন করো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, সেখান থেকে পবিত্র বস্তু ব্যয় করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৭)

দান শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য : যে ব্যয় করবে, তাকেও সদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সৎ হতে হবে। দান হতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দান-খয়রাত করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭২)

নিয়তের ওপর ভিত্তি করে দানের প্রতিদান দেওয়া হবে। রাসুল (সা.) বলেন, আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। (বুখারি, হাদিস : ১)

যথাযোগ্য ব্যক্তিকে দান করতে হবে : যার জন্য ব্যয় করবে, তাকেও দান গ্রহণের যোগ্য হতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তির জন্য ব্যয় করলে দান ব্যর্থ হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘মানুষ কী ব্যয় করবে—এ বিষয়ে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন এবং মুসাফিরের জন্য। উত্তম কাজের যা কিছু তোমরা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৬)

লোক-দেখানো দান কবুল হয় না : দান শুধু তখন ‘আল্লাহর পথে ব্যয়’ বলে কবুল হবে, যখন দানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বার্থ উদ্ধারের চিন্তা থাকবে না, আত্মপ্রচার ও প্রদর্শনেচ্ছা থাকবে না, খোঁটা দেওয়া এবং কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা থাকবে না এবং বাছাই করে মন্দ ও নিকৃষ্ট ধরনের সম্পদ দেওয়া হবে না। বরং দানের সময় মন-মগজে আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা না থাকলেই ওই দান কবুল হবে আশা করা যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘(আর আল্লাহ সেসব মানুষকে পছন্দ করেন না) যারা লোক দেখানোর জন্য নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না। আসলে শয়তান যার সাথি হলো, সে অত্যন্ত নিকৃষ্ট সাথিই গ্রহণ করল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৮)

খোঁটা দানের মহিমা ক্ষুণ্ণ করে : খোঁটা দিলে দানের সুফল পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে ওই ব্যক্তির মতো নিজেদের দান বিনষ্ট কোরো না, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য নিজের অর্থ ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না।’  (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ-সম্পদ দান করে এবং দানের পর খোঁটা ও কষ্ট দেয় না, তাদের মালিকের কাছে তাদের জন্য আছে পুরস্কার, তা ছাড়া তাদের কোনো ভয় এবং দুশ্চিন্তা থাকবে না। একটি ভালো কথা আর ক্ষমাসুন্দর ব্যবহার, সেই দানের চেয়ে উত্তম, যার অনুগামী হয় কষ্টদান। মূলত আল্লাহ মুখাপেক্ষিতাহীন পরম সহিষ্ণু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬২-২৬৩)

উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে দান : দান করার ক্ষেত্রে ভালো ও উৎকৃষ্ট বস্তুকে প্রাধান্য দিতে হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর পথে ব্যয় করো সেই উত্তম অর্থ-সম্পদ, যা তোমরা উপার্জন করেছ এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে উৎপন্ন করে দিয়েছি। বেছে বেছে তা থেকে মন্দটা আল্লাহর পথে দিয়ো না। কারণ এমনটি যদি তোমাদের কেউ দেয়, তাহলে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা ছাড়া তোমরাও তা গ্রহণ করবে না। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং প্রশংসিত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৭)

যথাসাধ্য গোপনে দান : যথাসম্ভব গোপনে দান করতে হবে। যদিও নিয়ত বিশুদ্ধ হলে কোনো কোনো দান প্রকাশ্যেও করা যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তা ভালো। আর যদি গোপনে দরিদ্রদের দাও, তাহলে তা বেশি ভালো। এমনটি করলে তোমাদের বহু পাপ মুছে দেওয়া হবে। তোমরা যা-ই করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭১)


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]