দেশের বাজারে লাগামহীন রডের দাম!


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 14-02-2023

দেশের বাজারে লাগামহীন রডের দাম!

ডলার সংকটের মুখে স্ক্র্যাপ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে রডের দাম। চলতি মাসের ১০ দিনেই প্রতি টন রডের দাম ৭ হাজার টাকা বেড়ে লাখ টাকা ছুঁতে বসেছে।

পুরাতন জাহাজ কেটে পাওয়া লোহার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা স্ক্র্যাপ দিয়ে দেশের বিভিন্ন কারখানায় অন্যতম নির্মাণসামগ্রী রড তৈরি হয়। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ রড উৎপাদনে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কখনোই রডের দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

বরং গত তিন মাসে নানা অজুহাতে রডের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। ৬০ গ্রেডের প্রতি টন রডের দাম প্রতিষ্ঠানভেদে ৯৪ হাজার টাকা থেকে ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম দশ দিনেই দাম বেড়েছে ৭ হাজার টাকা করে।

বাজার পর্যক্ষণ করে জানা যায়, বিএসআরএমের প্রতি টন ৬০ গ্রেডের রডের দাম বর্তমানে ৯৫ হাজার ৯০০ টাকা, যা গত মাসেই ছিল ৮৮ হাজার ৯০০ টাকা। জিপিএইচের প্রতি টন রড এখন ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেই ছিল ৮৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া একেএসের রডের দাম টনপ্রতি ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা, মাস খানেক আগেই এর প্রতি টন ছিল ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কেএসআরএমের ৬০ গ্রেডের প্রতি টন রডের দাম ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, যা গত মাসেই ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রডের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা দেন নানা অজুহাত। এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, আমদানিকারকরা এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না। বিভিন্ন ধরনের সংকট চলছে। এদিকে স্ক্র্যাবেরও সংকট। আবার চাহিদাও কম। তেমন বিক্রিও নেই।

রডের দাম বাড়তে থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা কাজ ফেলে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারদের দাবি, বর্তমানে যেসব উন্নয়নকাজ চলছে সেগুলোর টেন্ডার দর ২০২২ কার্যকর না হয়ে নির্ধারণ হয়েছে ২০১৮ সালের গণপূর্তের নিয়ম অনুযায়ী। সে অনুযায়ী প্রতি টন রডের দাম ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট, ৭ শতাংশ আয়কর ছাড়াও ক্যারিং চার্জ এবং শ্রমিক বিল পরিশোধ করতে হয়।

চট্টগ্রাম সম্মিলিত ঠিকাদার পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম মর্তুজা টুটুল বলেন, প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা হিসাবে প্রতি টন রডে ৩০ হাজার টাকা করে ঘাটতিতে আছি আমরা। কাজেই এভাবে আমরা কীভাবে কাজ করব?

বাংলাদেশে বছরে রড তৈরির কাজে ব্যবহৃত ৮০ লাখ টন স্ক্র্যাপ লোহার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৫ লাখ টন লোহা পুরাতন জাহাজ কেটে সংগ্রহ করা হয়। বাকি ৬০ লাখ টন স্ক্র্যাপ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু ডলার সংকটের মুখে গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে পুরাতন জাহাজ কিংবা স্ক্র্যাপ আমদানি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

সেই সঙ্গে সংকটের মুখে বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সমঝোতার মাধ্যমে রডের দাম বাড়িয়েছে বলেও ঠিকাদারদের অভিযোগ রয়েছে। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ অভিযোগ মানতে নারাজ। কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, জানুয়ারি মাসেই দুই দফায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সেটিও রডের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।  

বছরে চাহিদার ৭০ লাখ টনের পুরোটার দেশীয় কারখানা থেকে জোগান আসে। তবে অজুহাত কিংবা সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বেড়েই চলেছে রডসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম। আর ঠিকাদাররা কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। আর এ উন্নয়নকাজে গতি আনতে এখনই প্রয়োজন সরকারের যথাযথ তদারকি। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]