ডলার-সংকট অর্থ আটকে গেছে বিদেশি বিমানের


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 11-02-2023

ডলার-সংকট অর্থ আটকে গেছে বিদেশি বিমানের
ডলারের মূল্য এবং যাত্রী বৃদ্ধির কারণে টিকিটের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।

বাংলাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনস ও জাহাজে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা (আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স) আটকা পড়েছে। ডলার-সংকটের কারণে দেনদরবার করেও এই অর্থ ছাড় করানো যাচ্ছে না। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দুই খাতে। পাশাপাশি যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এই বিমানবন্দর থেকে বিদেশি অন্তত ২০টি বিমান সংস্থা প্রায় ৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব বিদেশি বিমান সংস্থার টিকিট বিক্রি হয় স্থানীয় এজেন্টের (জেনারেল সেলস এজেন্ট বা জিএসএ) মাধ্যমে।

টিকিট বিক্রির অর্থের একটি অংশ কমিশন হিসেবে রেখে বাকিটা ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারে বিদেশি এয়ারলাইনসের কাছে পাঠাতে হয়। কিন্তু ডলার-সংকটের কারণে ১১ মাস ধরে টিকিট বিক্রির প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাঠাতে পারছেন না সেলস এজেন্টরা। কবে নাগাদ এই অর্থ ছাড় করা হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) প্রতিবেদনেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে ডলার আটকে থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। আইএটিএ গত ডিসেম্বরে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ২০৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা) আটকে আছে।

আরও পড়ুন: শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার ছাড়ছে মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরন, জ্বালানির দাম বাড়লেও ভর্তুকি কমছে না

বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভাড়া পরিশোধের কাজটি হয় দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এমন ৩০টি এজেন্ট আছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ১০০ জাহাজে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। আমদানি কমে যাওয়ায় এখন ৬০-৭০টি জাহাজ চলাচল করে।

বিএসএএ বলছে, পণ্য রপ্তানির ভাড়া দুভাবে পরিশোধ করা যায়। এক. পণ্য রপ্তানির আগেই ভাড়া পরিশোধ। দুই. বিদেশে পণ্য নেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পণ্য গ্রহণ করে সে দেশে ভাড়া পরিশোধ করে। দুই ক্ষেত্রেই দেশীয় এজেন্ট নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পান। বাকি অর্থ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে (জাহাজের মালিকপক্ষ) পাঠাতে হয়।


কমেছে ফ্লাইট, বেড়েছে টিকিটের দাম

বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস মিলে ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৬ যাত্রী পরিবহন করেছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

২০২২ সালের প্রথম আট মাসেই পরিবহন করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫০ যাত্রী। চলতি বছর জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বেড়েছে। আবার টার্কিশ, সিঙ্গাপুর ও মালিন্দো এয়ারলাইনস ফ্লাইট আগের চেয়ে কমিয়েছে। এসব মিলিয়ে টিকিটের দাম হু হু করে বাড়ছে।

সিঙ্গাপুর, ব্যাংককের মতো স্বল্পদূরত্বের পথে যেতেও আগের চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এক এজেন্টের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও ৪৫ হাজার টাকায় থাই এয়ারের টিকিট পাওয়া যেত। এখন সেই টিকিটের দাম ৭০ হাজারের বেশি।

সম্প্রতি টার্কিশ এয়ারলাইনসে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন এমন এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে তিনি এই এয়ারলাইনসে ৮০ হাজার টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতেন। তখন ওয়ানওয়ে (শুধু যাওয়া) টিকিটের দাম ছিল ৬০ হাজার টাকা। এখন যাওয়া-আসার টিকিটের দাম প্রায় ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহারুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স না পেলে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমাবে, টিকিটের দাম বাড়াবে। এভাবে চললে ভিসা পেয়েও কেউ কেউ উড়োজাহাজের টিকিট পাবেন না।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্সের কারণে অনেক উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে বলে শুনেছি। চাহিদা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই টিকিটের দাম বেড়ে যাবে।’


জাহাজ ব্যবসায় প্রভাব

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে আমদানি কমে যাওয়ায় ভাড়া নিয়ে যাঁরা জাহাজ চালাতেন, তাঁরা আর চালাচ্ছেন না, শুধু নিজস্ব জাহাজগুলো চালাচ্ছেন। এতে জাহাজের সংখ্যা এমনিতেই কমে গেছে।

বিএসএএর জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ২০ কোটি ডলার আটকে আছে। কবে নাগাদ আটকে থাকা ডলার পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এতে জাহাজমালিকেরা শঙ্কায় আছেন। তাঁরা ভাবছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার পথে যাচ্ছে কি না।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভাড়ার অর্থ আটকে যাওয়ায় জাহাজমালিকেরা এখন আর ‘প্রিপেইড পদ্ধতিতে (আগেই এজেন্টকে ভাড়া পরিশোধ করা)’ পণ্য পরিবহন করছেন না। তাঁরা শুধু যে দেশে পণ্য যাচ্ছে, সে দেশ থেকেই ভাড়া নিচ্ছেন। এতে রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

কারণ, প্রিপেইড পদ্ধতিতে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে তাঁরা এজেন্টদের সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারতেন। এতে রপ্তানিকারকের আগের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি এয়ারলাইনস ও জাহাজের আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স আটকে থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]