নাটোরে সরকারিভাবে আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যর্থ হচ্ছে। আড়াই মাসে জেলায় মাত্র তিন মেট্রিক টন ধান ও এক হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। সরকারি দরের চেয়ে বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি হওয়ায় গুদামে বিক্রি করছেন না কৃষক।
চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ করতে সরকার প্রতি কেজির মূল্য নির্ধারণ করে ২৮ টাকা। তবে নাটোর জেলার হাটগুলোতে প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ২৯ থেকে ৪১ টাকায়। বাজারের চেয়ে কম দাম ও বাছাই করা ধান দিতে হয় বলে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের অনীহা।
পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমে দেরিতে মূল্য পরিশোধ ও ঘুষ ছাড়া কাজ না হওয়ার অভিযোগও করেন কৃষকরা। অন্যদিকে হাটে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সব ধরনের ধান নগদ টাকায় বিক্রি করা যায়।
এক কৃষক বলেন, সরকারি খাদ্য গুদামে গেলে আমাদের ধানের দাম কম দেবে। আবার ঘুষ দিয়ে ধান বিক্রি করতে হবে। এদিকে টাকাও অনেক দিন পরে ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়। যা আবার বাজার দর থেকে কম। তাই আমরা সরকারি গুদামে বিক্রি না করে বাজারে বিক্রি করছি।
সরকারি গুদামে ধান বিক্রি না করার বিষয়ে আরেকজন কৃষক বলেন, বাজারে আমরা নগদ টাকায় ধান বিক্রি করছি। আমরা যেখানে বেশি টাকা পাবো, সেখানেই ধান বিক্রি করবো।
এদিকে উৎপাদন খরচের চেয়ে সরকার কম দাম দেয়ায় চুক্তি অনুযায়ী চাল দিচ্ছেন না মিলাররাও। মিল মালিকরা জানান, ধানের বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতিকেজি চাল উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৪৬ টাকা। আর সরকার চালের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। লোকসান হওয়ায় তারাও খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করছেন না।
নাটোর গাজি অটো রাইস মিলসের স্বত্বাধিকারী গাজী মালেক বলেন, সরকারি গুদামে চাল বিক্রি করলে আমাদের কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। তবে লেবার খরচসহ অন্যান্য খরচ বাবদ আমাদের আরও অনেক খরচ হয়। তাই লোকসান করে তো পণ্য বিক্রি করা সম্ভব না।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলা থেকে মাত্র ৩ মেট্রিক টন ধান ও এক হাজার ৮০ মেট্রিক টন চাল কিনতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। এবিষয়ে নাটোরের খাদ্য কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে কৃষককে আমাদের কাছে ধান-চাল বিক্রির জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হওয়া ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি চলতি মাস পর্যন্ত চলবে। জেলায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৬ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ।